ডিজিটাল পরিমণ্ডলে গ্রহণযোগ্য এবং বর্জনীয় আচরণ

বর্তমান যুগে  - ইন্টারনেট মানুষের জীবনে  বিরাট প্রভাব ফেলছে । সহজে যোগাযোগ থেকে শুরু করে প্রয়োজনীয় তথ্য ও সেবা পাওয়া  এমনকি জীবিকার মত ব্যাপারগুলোর জন্যেও মানুষ অনলাইনের উপর নির্ভরশীল। ডিজিটাল পরিমণ্ডলে মানুষের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করতে এবং এর সুফল ভোগ করতে হলে কিছু আদবকেতা মেনে চলা জরুরী। সেজন্য ইন্টারনেট ব্যাবহারের জন্যে এই অনলাইন মাধ্যমে কী করা উচিত এবং কী করা উচিত না সেই ব্যাপারটা ভালো করে জানা উচিত। জেনে বুঝে অনলাইন মাধ্যম ব্যাবহার করলে একদিকে যেমন অনেক ঝামেলা এড়িয়ে চলা যায়, অন্যদিকে দীর্ঘমেয়াদে এর সুফল পাওয়া যায়।

 ১। পরস্পরের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন

অনলাইনে কারো সাথে আলাপের ক্ষেত্রে আমরা হয়তো সামনাসামনি আলাপ করছিনা কিন্তু প্রতিটা অনলাইন একাউন্টের পিছনে তো এক একজন মানুষই আছে। যে কথাগুলো সামনাসামনি বলতে পারিনা সেগুলো আমরা অনলাইন বলতে পিছপা হই না অনেকসময় । তা যত তিক্ত-কটু কথাই হোক না কেন। কিন্তু এটা কি ঠিক? আমরা সকলেই ভিন্ন ভিন্ন মানসিক অবস্থা , ভিন্ন ভিন্ন মতবাদ ধারণ করি। আপনার সাথে কারো মতের মিল নাই, হতে পারে, কিন্তু সেজন্য অশ্রদ্ধা দেখানো উচিত না। পারস্পরিক শ্রদ্ধা বজায় রেখে যোগাযোগ করুন, যেন একে-অপরের বিপদে-আপদে সাহায্য করতে পারেন।

 ২। আপনার মন্তব্য কী বোঝাচ্ছে সে ব্যাপারে সতর্ক থাকুন

বাস্তব জগতে কথা বলার সময় যোগাযোগের বড় একটা অংশ বডি ল্যাঙ্গুয়েজ বা শারীরিক অভিব্যক্তি। আপনার কথার পাশাপাশি মুখের অভিব্যক্তি কিংবা অঙ্গভঙ্গি অনেক অর্থ বহন করে। অনেককিছুই আমরা মুখে না বললেও বডি ল্যাঙ্গুয়েজে বুঝে নেই। আবার কেউ কিছু না বুঝলে আবার বলে বুঝিয়ে নেয়ারও সুযোগ থাকে এখানে৷ কিন্তু অনলাইনে কোন একটা লেখা বা কথায় এই বাড়তি ব্যাপারগুলো থাকেনা। শুধুমাত্র লেখার মধ্য দিয়েই সবটুকু বুঝে নিতে হয়, যার ফলে ভুল বোঝাবুঝির অবকাশ থাকে। সেজন্য চেষ্টা করা উচিত যাতে সহজ  ভাষায় বলা যায়। নাহলে আপনার কথা ভুল বুঝে  কেউ কষ্ট পেলে বা রেগে গেলে তো সমস্যাই। কখনো ভুলবোঝাবুঝিসৃষ্টি হলে অপর পক্ষের দৃষ্টিকোণ থেকে বিষয়টি দেখার চেষ্টা করুন এবং আপনি সরাসরি কথা বলে এই ভুল বোঝাবুঝির অবসান ঘটাতে আগ্রহী এমনটাও জানিয়ে দিতে পারেন। 

 ৩. সার্কাজম ও হিউমারের ক্ষেত্রে সতর্ক থাকুন

সামনাসামনি যোগাযোগ না হবার কারণে রম্য বা মজা করে বলা কথা অনেকে বুঝতে পারেন না। আবার অনেক সময় ইমোটিকন বা ‘LOL’এই ধরণের কোড দিয়ে সিরিয়াস কথা বলেও আসলে রম্য বোঝানো হয়, যা অনেকেই বুঝতে পারেন না। সেজন্য অনলাইন ফান করার ক্ষেত্রে সচেতন থাকা উচিত। আপনি যা লিখছেন তা আবারো ভালোমত পড়ে দেখে নিন যে আপনার হিউমারটা অধিকাংশ লোকেই বুঝবে কিনা। আবার অনেকসময় হিউমার প্রকাশের ক্ষেত্রে লেখার সাথে বিশেষ বিশেষ ইমোটিকন এর ব্যবহার করলে অন্যরা বিষয়টি যে নিছক মজা করার জন্য লেখা তা বুঝতে পারে। 

 ৪। অবাঞ্ছিত ব্যক্তির থেকে আপনার তথ্য নিরাপদ রাখুন

অনলাইনের প্রাইভেসি স্যাটিংস এর মাধ্যমে আপনার তথ্য গোপন রাখুন। ব্যক্তিগত তথ্য পাবলিক করে রাখলে বিভিন্ন ধরনের বিড়ম্বনার শিকার হতে পারেন। সেজন্য আগেভাগেই সতর্ক থাকা ভালো। অনলাইন মাধ্যমে ব্যক্তিগত তথ্য যেমন ফোন নাম্বার, ইমেইল এড্রেস, ঠিকানা এসব একান্ত ব্যক্তিগত তথ্য সকলের সাথে শেয়ার করা থেকে বিরত থাকুন।

 ৫. ফ্রেন্ড রিকুয়েস্ট এবং গ্রুপের আমন্ত্রণ গ্রহণের আগে ভালোমত দেখে নিন

নতুন কোন রিকুয়েস্ট আসলে সে ব্যক্তির একাউন্ট ভালমতো দেখে নিন যে এই ব্যক্তিকে আপনি চেনেন কিনা, বা তাকে ফ্রেন্ড লিস্টে রাখতে আপনি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করবেন কিনা। গ্রুপ বা পেইজের ইনভাইটেশনের ব্যাপারেও খেয়াল রাখবেন যে এগুলো আপনার প্রয়োজনীয় কিনা। যদি না হয় তাহলে এক্সেপ্ট না করাই ভালো। একই কথা মেসেঞ্জারে মেসেজ রিকোয়েস্টের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। যেমন- ফেসবুকে একজন মানুষের বন্ধু না হলেও তিনি আপনাকে মেসেঞ্জারে মেসেজ পাঠাতে পারেন। তাঁর সাথে বন্ধুত্ব করতে না চাইলে কিংবা অনাকাঙ্ক্ষিত মেসেজ পাঠালে তাঁর উত্তর না করে সরাসরি ব্লক করুন। অনেকসময় পরিচিত মানুষজনের কাছ থেকে আর্থিক সাহায্য চেয়ে মেসেজ আসে, সেক্ষেত্রে তাঁর সাথে কথা না বলে কিংবা ভিডিওকলের মাধ্যমে আসলেই মানুষটি সে কিনা তা নিশ্চিত না হয়ে আর্থিক লেনদেন করবেন না। হুট করেই পাঠানো কোন লিংকে না জেনে বুঝে ক্লিক করবেন না। 

 ৬. কমিউনিটি স্ট্যান্ডার্ড ভালোমত পড়ে, বুঝে নিন

 অনলাইন ওয়েবসাইট ও অ্যাপের নিয়ম বা কমিউনিটি স্ট্যান্ডার্ড ভালো করে জেনে নিন। বেশিরভাগ অনলাইন ফোরাম, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এবং গেমিং সাইটগুলোর নিজস্ব কমিউনিটি স্ট্যান্ডার্ড বা গ্রাহকদের অনলাইন আচরণের নির্দেশনা থাকে। এসব আচরণ না মানলে অনলাইন মাধ্যমে বিভিন্ন ধরণের ব্যবস্থা গ্রহন করা হয়। তাই কোন গ্রুপে যুক্ত হবার সময় নিয়মনীতি এবং আচরণবিধি ভালোমত পড়ে নিন। 

 ৭. সহানুভূতিশীল হোন

অনলাইনে মাধ্যমের সবাই ভালোমত জেনে বুঝে ব্যবহার করতে জানে তা কিন্তু না। সেক্ষেত্রে কেউ যদি অযাচিত কোন কথা বলে বা লেখে তাহলে তাদের কে ভালোভাবে বোঝান। তারপরও না বুঝলে ওই সাইটের নিয়ম মেনে রিপোর্ট করুন বা ব্যবস্থা নিন। খুব বেশি আক্রমণাত্মক বা অপমানজনক আচরণ না করাই শ্রেয়।

 ৮। ব্যক্তিগত আক্রমণকরা থেকে বিরত থাকুন।

অনেক সময় দ্বিমত হতে পারে অনেকের সাথে। সেসব ক্ষেত্রে পারস্পরিক সম্মান বজায় রেখে বিতর্ক করুন। সবচেয়ে ভালো হয় যদি বিষয়টিকে এড়িয়ে যেতে পারেন। আর পরিচিত মানুষজন কিংবা বন্ধুবান্ধব হলে কথা বলে কিংবা মেসেঞ্জারে আলাদাভাবে আলাপ করে আপনার অবস্থান ব্যাখ্যা করতে পারেন।কোন অবস্থাতেই ব্যক্তিগত আক্রমণ করবেন না, ব্যক্তিগত আক্রমণ তিক্ততা বাড়ায়। সেইসাথে আপনাদের মিউচুয়াল বন্ধু যারা আছেন তাদের কাছেও আপনার সম্মান নষ্ট হতে পারে। পরস্পরের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝি সৃষ্টি করে এবং শান্তি বিনষ্ট করে, যার প্রভাব ব্যক্তিজীবনেও পড়ে।