ইন্টারনেট বা সামাজিক মাধ্যমে তথ্য শেয়ার করার পূর্বে তথ্যের সঠিকতা, নির্ভরযোগ্যতা ও বিশ্বাসযোগ্যতা যাচাইবাছাই করার প্রক্রিয়া

অনলাইনে মিথ্যা তথ্য ছড়ানোর বড় ধরণের প্রভাব আছে আমাদের জীবনে। মিথ্যা তথ্যের ভিত্তিতে এদেশে মানুষের ঘরবাড়ি পর্যন্ত পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে। এই মিথ্যা খবরগুলো সত্যের থেকে অনেক বেশি প্রচার পায়। এগুলো অনেক বেশি প্রচার পায়। অনলাইনে অতি প্রচার হওয়াকে বলে ভাইরাল হওয়া। এই ভাইরালের লোভে ভুল তথ্য অসম্ভব-রকম বেড়ে গেছে। একটা সময় ছিলো তথ্য অতটা সহজলভ্য ছিলোনা। এই তথ্যের সহজলভ্যতার যুগে অনেক অনেক তথ্য থেকে সত্য খুঁজে নেয়া কঠিন হয়ে গেছে। বলতে গেলে সঠিক তথ্য এখনো সহজলভ্য হয়নি আসলে। এই বিভ্রান্তিকর অবস্থায় সঠিক তথ্যটি চিনতে না জানলে অনলাইন মাধ্যম আপনাকে বিভ্রান্ত করেই যাবে।

 

কীভাবে তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত হবেন?

 

১। ওয়েবসাইটের এড্রেস খেয়াল করুন

পরিচিত প্রায় সব ওয়েবসাইটের নিজস্ব ডোমেইন থাকে এবং ওয়েব এড্রেসও নির্দিষ্টই। যেমন যদি কোন সাইটের ওয়েব এড্রেস এর শেষটা হয় .com.co তাহলে আমাদের ভ্রু কোচকানোই স্বাভাবিক। এমন অস্বাভাবিক বা অপরিচিত ওয়েবসাইট থেকে তথ্য নেবার ক্ষেত্রে সতর্ক থাকবেন। যেমন abcnews.com  একটি পরিচিত ওয়েবসাইট কিন্তু abcnews.com.co তেমন পরিচিত নয় , সন্দেহজনক।

 

২। ওয়েবসাইটের এবাউট আস (About Us) সেকশন পড়ে নিন

এখানে সাধারণত সাইটগুলো নিজেদের লক্ষ্য, উদ্দেশ্য এসব বলে থাকে। এই জায়গায় সবকিছু সরাসরিই বলা হয়ে থাকে। এখানের লেখা যদি মনে হয় বিভ্রান্তিকর তাহলে সচেতন হতে হবে।

 

৩। তথ্যসূত্র এবং উদ্ধৃতি আছে কিনা দেখুন

সঠিক তথ্য হলে তথ্যসূত্র এবং উদ্ধৃতি থাকবে। এগুলো না থাকা মানে এই তথ্য সঠিক নাও হতে পারে। অনেক অনলাইন নিউজ পোর্টাল আছে যেগুলোতে ভুল তথ্য শেয়ার করে মানুষকে বিভ্রান্ত করা হয়। যেগুলোতে অনেক বিশেষজ্ঞ মতামতও পাবেন যার বেশিরভাগই ভুয়া।

 

৪। কমেন্ট বক্সে অন্যদের কমেন্ট দেখুন

অনেক আপাত আকর্ষণীয় কিন্তু মিথ্যা খবরের শিরোনাম দেখে এমনকি পুরো লেখাটা পড়েও সত্যি-মিথ্যা যাচাই করা সম্ভব হয়না৷ সেক্ষেত্রে অন্যদের কমেন্ট দেখলেই বোঝা যায়। শিরোনাম এমনভাবে দেয়া হয় যাতে সহজেই দৃষ্টি আকর্ষণ করে। ভুয়া তথ্যসূত্র দিয়ে ব্যাপারটা সত্য প্রমাণের চেষ্টাও করা হয়। সেসব যাচাইয়ের ভালো উপায় হচ্ছে অন্যদের কমেন্ট।

 

৫। খবরের বা লেখার ছবি সার্চ করতে পারেন

মিথ্যা খবর যারা বানায় তাদের একটা প্রবণতা হল লেখার মাঝের ছবিগুলো আগের কোন ছবি ইন্টারনেট থেকে সংগ্রহ করে ব্যাবহার করা। যেমন ধরুন কোন এক জায়গায় কোন এক বিশেষ জাতিকে নির্যাতনের খবর প্রকাশ করা হলো। সেই খবরে ছবি দিয়ে দিলো পূর্বে ঘটা অন্য কোন ঘটনার। এই ছবিটা গুগলে সার্চ করলে যদি দেখেন যে এই একই ছবি পূর্বের কোন খবরে ব্যাবহার হয়েছে তাহলে ধরে নিতে পারেন যে এই খবরটি ভুয়া। কারো চিকিৎসার জন্যে সাহায্যের আবেদন, কেউ বিপদে পড়েছে বলে আর্থিক সাহায্য করতে বলা কিংবা কারো সাফল্যের গল্প, কিছু আবিষ্কারের গল্পও অনেকসময়ই মিথ্যা হয়ে থাকে। ছবি যাচাই করে দেখলেই বুঝতে পারবেন।

 

৬। গুগলে সার্চ করে দেখে নিন

যে তথ্য কোন একটা মাধ্যমে পেয়েছেন সেই তথ্য গুগলে সার্চ করে দেখুন। যদি দেখা যায় এই খবরের বিরুদ্ধেও অনেক খবর আছে তাহলে বিশ্বাস করে ঠকতে যাবেন না।

 

৭। নিজ প্রজ্ঞা কাজে লাগান, শুরুতেই বিশ্বাস করবেন না

বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই আমরা যে ভুল করি তা হলো কোন রকম যাচাই না করেই বিশ্বাস করে ফেলা। যাচাই না করে অন্ধের মত বিশ্বাস করে ফেলাটা এই মিথ্যা তথ্যের যুগে বড় ধরণের বোকামি। ভালোমতো পড়লেই অনেক তথ্যের সত্যাসত্য যাচাই করে ফেলা যায়। বিশেষ করে পুরো ভিডিও না দেখে, পুরো খবর না পড়ে শুধুমাত্র শিরোনাম দেখে বিশ্বাস করে ফেলা মানে তথ্য সন্ত্রাসের ফাঁদে পরে যাওয়া!

 

৮। তথ্যসূত্র যাচাই করে দেখুন

অনেক ক্ষেত্রেই মিথ্যা তথ্য হয়তো কোন একটা ফেসবুক পোস্ট বা টুইটারের টুইটকেই তথ্যসূত্র ধরে নেয়। খেয়াল করলেই দেখবেন সমাজে এমন অনেক মানুষ আছে যারা শোনা কথার উপর ভিত্তি করে অনেক কথা ছড়ায়। এই তথ্য কোথা থেকে জানলো তা জিজ্ঞেস করলে প্রায়শই দেখা যাবে কারো থেকে শুনে সে এই কথা বলছে। অনলাইন মাধ্যমেও এই ব্যাপারটা অনেক দেখা যায়। কোন একটা ফেসবুক পোস্ট, ইউটিউব ভিডিও বা টুইট কখনো নির্ভরযোগ্য কোন সূত্র হতে পারেনা। যে লেখা পড়ছো তার তথ্যসূত্রগুলো যাচাই করলে এই লেখার সত্যাসত্য যাচাই করা যাবে।

 

৯। মজা করে বলা কিনা খেয়াল করুন

অনেক জরুরি বিষয়েও অনলাইনে মজা করে অনেককিছু বলতে দেখা যায়। সেক্ষেত্রে এই রম্য ধাঁচের লেখাগুলো ভালো করে পড়ে তারপর বুঝে সত্য-মিথ্যা বিবেচনা করা প্রয়োজন।

এই সতর্কতাগুলো পালনের মাধ্যমে, এই সামান্য সচেতনতার মাধ্যমেই অনেক বিভ্রান্তি এড়িয়ে চলা যায়।