কপিরাইট সংরক্ষণে করণীয়

তুমি বাজারে গিয়ে যদি কোন টাকা ছাড়াই সব কিনে ফেলতে পারো তাহলে কী ভালোই হতো, তাইনা? না, ভালো হতো না। তুমি ক্রেতার দিক থেকে ভাবছো বলে ভালো মনে হচ্ছে, একবার বিক্রেতার দিক থেকে ভাবো। ধরো, তুমি একজন বিক্রেতা যার কাছ থেকে সকলে পণ্য নিয়ে নিচ্ছে কিন্তু তার মূল্য দিচ্ছেনা। সাধারণ বাজারের ক্ষেত্রে হয়তো এই ব্যাপারটা হয়না, কিন্তু মেধা সম্পদের ক্ষেত্রে একজন কোন একটা পণ্য ক্রয় করে সেই পণ্যকে কপি করে অনেকের কাছে বিক্রি করে। এই বিক্রির কোন অংশ যিনি আসল মালিক তিনি পাননা। পান যিনি সেটার কপি বা পাইরেসি করছেন। সেক্ষেত্রে পাইরেসি বন্ধে কার্যকর কপিরাইট আইন এই মেধাসম্পদের নিরাপত্তা দেয়।

মেধা সম্পদ, পাইরেসি এবং কপিরাইট আইন কী?

একজন কবি যে কবিতা লেখেন, শিল্পী যে গান করেন, ছবি আকেন বা ভাষ্কর্য্ নির্মাণ করেন, চলচ্চিত্রকার যে সিনেমা বানান, নাট্যকার যে নাটক বানান সেসব হচ্ছে ইন্টেলেকচুয়াল প্রোপার্টি বা মেধা সম্পদ। মেধা সম্পদের বেআইনি কপি করে যদি কেউ সেসব বিক্রি বা ব্যবহার করে সেটি হবে পাইরেসি। এই পাইরেসি বন্ধ এবং মেধা সম্পদের নিরাপত্তা প্রদানের লক্ষ্যে প্রণয়ন করা আইন হচ্ছে কপিরাইট আইন।

কোন বস্তুগত জিনিসের যেমন মালিকানা থাকে, তেমনই প্রতিভা ও মেধা দিয়ে তৈরি সম্পদেরও মালিকানা থাকে। কপিরাইট মানে হচ্ছে মেধাগত সম্পদের উপর মালিকানার স্বীকৃতি। এই সম্পদটি ব্যাবহার, বিপণন বা ক্রয়-বিক্রয়ের উপর যিনি সৃষ্টি করলেন তার অধিকার সুরক্ষিত করে কপিরাইট আইন। 

বাংলাদেশে কপিরাইট আইন আছে, কিন্তু সে আইন মানার চর্চা ও প্রয়োগ না থাকায় অনেকেই এই বিষয়ে জানেন না। এই বিষয়ে তাই আমাদের জানা, মানা এবং চর্চা করা প্রয়োজন। 

কপিরাইট আইন ভঙ্গের কারণ ও ক্ষতি:

কপিরাইট সংরক্ষণে বাংলাদেশে আইন আছে, কিন্তু সে আইনের কার্যকর প্রয়োগ নেই। এর কারণ সম্ভবত ব্যবহারকারী এবং  এর উৎপাদক এই দুই দলের মানুষের মধ্যে কারোরই এই আইন ও আইনের প্রয়োগ সম্পর্কে ভালো ধারণা না থাকা। এর পিছনে সাংস্কৃতিক কিছু কারণও হয়তো দায়ী। যেমন আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থায় বা জীবনে চলার পথে আমরা অন্যের কোন মেধা সম্পদ থেকে কিছু নিলে বা সরাসরি ব্যবহার করলে সেজন্য মূল মালিককে কৃতিত্ব দিতে অভ্যস্ত নই। আবার নিম্ন আয়ের দেশ হওয়ায় সকলেই মৌলিক প্রয়োজনের বাইরে বিনোদন বা বুদ্ধিবৃত্তিক উন্নতির জন্যে বাড়তি অর্থ ব্যয় করতে সাধারণত আগ্রহী হয়না। আবার ডিজিটাল প্রযুক্তির সাথে তাল মিলিয়ে নতুন নিরাপত্তা ব্যবস্থা বা নতুন বিপণন ব্যবস্থা তৈরি করতে না পারাও বড় একটি কারণ।  সর্বোপরি বলা যায়, এই আইন সম্পর্কে ভালোভাবে জানাশোনা এবং আইনের প্রয়োগ থাকলে মেধাসম্পদের নিরাপত্তা দেয়া অনেক সহজ হয়ে যায়। এই আইন ভঙ্গের কারণে সৃজনশীল মানুষদের বিপুল পরিমাণ ক্ষতি হচ্ছে এবং এই ক্ষতির জন্যে আমাদের শিল্প-সাহিত্য-চলচ্চিত্র সেভাবে মাথা তুলে দাড়াতে পারছেনা। একজন লেখক বই প্রকাশ করার পর সেই বই যদি কপি করে কেউ মুনাফা করে ফেলে বা তা বিনামূলে সবার কাছে ছড়িয়ে দেয় তাহলে লেখক আর নতুন কোন বই লিখে বিক্রির আশাই হয়তো করবেন না। এভাবেই চলচ্চিত্রনির্মাতা, সঙ্গীতশিল্পী বা এ ধরনের যে কোন শিল্পই পাইরেসির কারণে ক্ষতির শিকার হচ্ছে।

বাংলাদেশে কপিরাইট আইন ও কপিরাইট সংরক্ষণ করার উপায় কী?

বাংলাদেশে ১৯৭৪ সালে প্রথম কপিরাইট আইন করা হয়। এরপর ২০০০ সাল এবং ২০০৫ সালে এই আইন পরিবর্তন করা হয়। সর্বশেষ পরিমার্জন করা হয় ২০১৮ সালে।

বুদ্ধিবৃত্তিক সম্পদগুলো পেটেন্ট অফিস থেকে নিজ নামে পেটেন্ট করে নিতে হয়। পেটেন্ট করা মানে হচ্ছে সরকারী রেজিস্ট্রেশন করে নিজ নামে এই সম্পদের সামগ্রিক অধিকারের সরকারি স্বীকৃতি। পরে যদি অন্য কেউ এটি ব্যবহার করে তাহলে সে মূল নির্মাতাকে কৃতিত্ব দিবে এবং ক্ষেত্রবিশেষে মুনাফার ভাগ দিবে। কপিরাইট সংরক্ষণে করণীয় -

-      সরকারি কপিরাইট অফিসে যেকোন মেধা সম্পদের রেজিস্ট্রেশন করতে হবে। এর মাধ্যমে প্রমাণ হবে এর স্বত্ত্ব কপি রাইট রয়েছে যার তার। রেজিস্ট্রেশন না হলে পাইরেসির বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয়া যায় না।

-      পাইরেসি হলে উপযুক্ত প্রমাণসহ লিখিত অভিযোগ করতে হবে।

-      সবার মধ্যে কপিরাইটের ব্যাপারে যথাযথ সচেতনতা তৈরি করতে হবে।

-      সকল ক্ষেত্রে আইনের প্রয়োগ কঠোর করতে হবে।