অনলাইন আসক্তির ক্ষতিকর প্রভাব

রুহী প্রথম শ্রেণিতে পড়ে। তার খুব পছন্দের একটি কার্টুন হলো ‘মোটু পাতলু’। সপ্তাহে চারদিন বিকাল বেলায় সে তার ছোট ভাইয়ের সাথে টেলিভিশনে কার্টুনটি দেখে। একদিন সে তার বান্ধবী দিতির কাছ থেকে জানতে পারল যে সে ইন্টারনেটের মাধ্যমে দিনের যেকোনো সময় কার্টুনটি দেখতে পারে। পরের দিন বাসায় এসে সে আসলেই বুঝতে পারল অনলাইনে সে যে কোন সময় যে কোন কার্টুন দেখতে পারে। এভাবে রুহী তার বাবার  মোবাইল ফোন দিয়ে বিভিন্ন কার্টুন ঘণ্টার পর ঘণ্টা দেখা শুরু করলো।

অন্যদিকে, শুভ কম্পিউটারে গেম খেলতে পছন্দ করে। দিনের একটি নির্দিষ্ট সময়ে সে গেম খেলে। তার মার অফিসের কাজের জন্য বাসায় ইন্টারনেট সংযোগ নেওয়ার পর সে প্রায়ই নতুন নতুন গেম ডাউনলোড করা শুরু করে এবং দিনের বেশির ভাগ সময় গেম খেলে নষ্ট করতে থাকে। এজন্য প্রায়ই তার বাবা  তাকে বকা-ঝকা করছে।

উপরের দুইটি ঘটনা থেকে আমরা কী বুঝতে পারি? আমরা বুঝতে পারি যে  রুহী এবং শুভ ইন্টারনেটের প্রতি আসক্ত হয়ে যাচ্ছে। এই ধরনের অনলাইনে আসক্তির পরিণতি ভয়াবহ। এতে করে তারা বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হতে পারে, এবং নানাবিধ ক্ষতি স্বীকার করতে হতে পারে। 

তাহলে এখন জেনে নিই, অনলাইন আসক্তির ফলে তাদের কী সমস্যা হতে পারে-

 

•          বেশির ভাগ সময় অনলাইনে কাটানোর ফলে পরিবারের অন্যান্য সদস্যের সাথে একটি দূরত্ব সৃষ্টি হয়ে যায়। আবার, পরিবারের সদস্যরা বার বার ইন্টারনেট ব্যবহার করতে নিষেধ করায় তাদের প্রতি বিরূপ মনোভাব সৃষ্টি হতে পারে।

•          অনলাইনে আসক্তির কারণে তারা বিভিন্ন উৎসবে সবার সাথে দেখা সাক্ষাৎ করতে অনাগ্রহ প্রকাশ করে  থাকে। সমাজে সকলের সাথে মিলেমিশে চলার আগ্রহ কমে। ফলে শিশুদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশ বাধাগ্রস্থ হতে পারে।

•          খাওয়া-দাওয়ার প্রতি অনীহা চলে আসে। এজন্য শারীরিক ভাবেও সে দুর্বল হয়ে পড়তে পারে এবং বিভিন্ন ধরনের অসুস্থতার মুখোমুখি ও হতে পারে।

•          একই জায়গায় অনেকক্ষণ বসে থেকে ডিজিটাল ডিভাইস ব্যবহার করলে কোনো ধরণের শারীরিক পরিশ্রম হয় না। এতে করে বিভিন্ন ধরনের শারীরিক সমস্যাও দেখা দেওয়ার সাথে সাথে স্থুলকায় বা মোটা হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যেতে পারে।

•          দৃষ্টিশক্তি ও শ্রবণশক্তি হ্রাস পাওয়া সহ বিভিন্ন ধরণের মানসিক সমস্যার সম্মুখীন হতে পারে।

•          বিভিন্ন ধরনের অনলাইন ঝুঁকির (যেমন-হ্যাকিং, ফিশিং, তথ্য চুরি) সম্মুখীন হতে পারে।

 

ডিজিটাল ডিভাইসের ব্যবহার আমাদের দৈনন্দিন জীবনে অনেক গুরুত্বপূর্ণ এবং ডিজিটাল ডিভাইস ব্যবহারের মাধ্যমে বিভিন্ন প্রয়োজনে আমরা অনলাইনে কাজ করে থাকি। কিন্তু আমাদের মনে রাখতে হবে, এই অনলাইনে আমাদের এতো বেশি সময় দেওয়া যাবে না যাতে এটি আমাদের শারীরিক ও মানসিক ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়।