অনলাইন সেবা/অ্যাপ/ ডিভাইস অতি ব্যবহারের স্বাস্থ্যগত ঝুঁকি

তুমি কি তোমার বাবা-মা বা বড় ভাই-বোনের মোবাইলে গেম খেলতে পছন্দ করো? গেম খেলতে গিয়ে কি তুমি সময় বেশি নষ্ট করে ফেলো? কম্পিউটারের সামনে কি অনেকক্ষণ বসে থাকা হয়?

প্রশ্নগুলোর উত্তর যদি  “হ্যাঁ” হয়ে থাকে তাহলে কিন্তু সেই মোবাইল ডিভাইসটি তোমার জন্য ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। বর্তমান বিশ্বে মোবাইল ফোনের মত আরও বিভিন্ন প্রযুক্তির ব্যবহার বৃদ্ধি পাওয়ার সাথে সাথে নতুন একটা আলোচনা সামনে চলে এসেছে , তা হলো-এই প্রযুক্তি কি আমাদের জন্য আশির্বাদ নাকি অভিশাপ?

প্রকৃতপক্ষে, অতিরিক্ত যে কোন কিছুই ক্ষতিকর। যে কোন ডিজিটাল ডিভাইস যদি সঠিক নিয়মে ব্যবহার করা না হয় অথবা যদি অতিরিক্ত সময় ধরে ব্যবহার করা হয়, তাহলে ব্যবহারকারী বিভিন্ন রকমের ক্ষতির শিকার হতে পারেন। মোবাইল ফোন ও কম্পিউটারের অতিরিক্ত ব্যবহারে ডিভাইস যেমন নষ্ট হয়ে যেতে পারে তেমনি বিভিন্ন ধরনের স্বাস্থ্যগত ঝুঁকি আছে। ডিজিটাল ডিভাইসের অতিরিক্ত ব্যবহারের যে সকল সমস্যা হতে পারে।

মোবাইল ফোন অতি ব্যবহারে স্বাস্থ্য ঝুঁকি

(১) অমনোযোগিতা

বেশিরভাগ সময় দেখা যায়, মোবাইল ফোন আমাদের কোনো কাজের প্রতি মনোযোগ নষ্ট করে দেয়। এর ফলে যারা মোবাইল ফোন অতিরিক্ত ব্যবহার করে তাদের যে কোনো কাজ করতে তাদের স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে অনেক বেশি সময় লাগে।  

(২) চোখের সমস্যা

দীর্ঘক্ষণ এবং চোখের খুব কাছে ফোন ব্যবহার করলে মাথাব্যথা, চোখ ব্যথা, চোখে ঝাপসা দেখা-এরকম নানা রকম সমস্যা দেখা দেয়। বর্তমানে বেশির ভাগ শিশু মোবাইল গেম, কার্টুন- এসবের প্রতি বেশ আসক্ত। এজন্যই তাদের চোখের সমস্যার সম্ভাবনা বেশি থাকে।

 (৩) মানসিক সমস্যা

বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত যে, মোবাইল ফোন থেকে নিঃসরিত তড়িত-চৌম্বকীয় তরঙ্গের কারণে অনিদ্রা, আলঝেইমার ও পারকিনসন’স এর মত বিভিন্ন জটিল রোগ দেখা দেয়। 

(৪) শ্রবণশক্তি হ্রাস পাওয়া

যারা দীর্ঘক্ষণ মোবাইল ফোনে কথা বলেন তাদের কানের বিভিন্ন সমস্যা যেমন-কানে কম শোনার ঝুঁকি অনেক বেশি। দৈনিক ২-৩ ঘন্টার বেশি সময় মোবাইলে উচ্চ শব্দে গান শোনা, কার্টুন দেখা, গেম খেলার সাথে জড়িত শিশুরা আংশিকভাবে বধির হয়ে যাওয়ার ঝুঁকিতে থাকে। 

কম্পিউটারের অতি ব্যবহারে স্বাস্থ্য ঝুঁকি

ব্যবসা বানিজ্য, অফিস, উচ্চশিক্ষা বাদেও কম্পিউটার এখন স্কুলে পড়াশুনার  জন্যও প্রয়োজনীয়। অনলাইনে ক্লাস করা ছাড়াও স্কুলের বিভিন্ন অ্যাসাইনমেন্ট এর কাজেও কম্পিউটার ব্যবহার করা হয়। এগুলো বাদেও কম্পিউটার গেম খেলা, গান, সিনেমা দেখা এবং অন্যান্য কাজেও শিশুরা কম্পিউটার ব্যবহার করে। একটানা অনেকক্ষণ কম্পিউটারের ব্যবহার মারাত্মক ক্ষতিকর পরিণতি বইয়ে আনতে পারে। একটানা অনেকক্ষণ কম্পিউটার ব্যবহারের ফলে বিভিন্ন জটিল রোগের জন্ম হতে পারে। এরকম কিছু সমস্যার বিষয়ে আলোচনা করা হলোঃ 

কম্পিউটারের স্ক্রিনের দিকে একটানা তাকিয়ে বসে থাকার কারণে পিঠের ওপর ক্রমাগত চাপ পড়ে ও দেহে রক্ত চলাচল ব্যহত হয়। দীর্ঘক্ষণ চেয়ারে বসে থাকাটা শরীরের ওপর ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে। তারপরে যদি সেই বসাটা সঠিকভাবে না হয় তাহলে পিঠে ব্যথা সহ আরও মারাত্মক সমস্যার সৃষ্টি করে। এছাড়া দীর্ঘসময় কম নড়াচড়ার কারণে কম পরিমাণ ক্যালোরি খরচ হয় এবং আমাদের অজান্তেই ওজন বৃদ্ধিসহ হৃদরোগ, ক্যান্সার, ডায়াবেটিসের মতো জটিলতা তৈরি হতে পারে।  

একদৃষ্টিতে দীর্ঘক্ষণ ডেস্কটপ বা ল্যাপটপের স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে থাকার ফলে চোখের ওপর মারাত্মক চাপ পড়ে। এর ফলে চোখের দৃষ্টি ঝাপসা হয়ে যাওয়া সহ চোখের অস্বস্তি, চোখ জ্বালা, চোখ শুকিয়ে যাওয়া, লাল হয়ে ওঠা, চোখ চুলকানো, মাথাযন্ত্রনা হতে পারে। যেসকল শিশু অনেকক্ষণ ধরে কম্পিউটার গেমস খেলে তাদের মধ্যে এই সমস্যা গুলো প্রায়ই লক্ষ করা যায়। এজন্য কম্পিউটারে স্ক্রিন প্রোটেক্টর ব্যবহার করা যেতে পারে যাতে চোখের তুলনামূলক কম ক্ষতি হয়।