অনলাইনে নিরাপদে লেনদেনের উপায়

বর্তমান যুগে টাকাপয়সা, জিনিসপত্র কিংবা তথ্য লেনদেনের ক্ষেত্রে অনলাইন মাধ্যমগুলোর ব্যবহার সময়ের সাথে সাথে বেড়েই চলেছে। অনলাইন ব্যাংকিং যেখানে স্বল্প সংখ্যক মানুষ ব্যবহার করছে সেখানে মোবাইল ব্যাংকিং এর সুবিধা নিচ্ছে সর্বস্তরের লাখ লাখ মানুষ। কিন্তু লেনদেনের সঠিক নিয়মকানুন জানার অভাবে আর্থিক ক্ষয়ক্ষতির পাশাপাশি হয়রানির শিকার হওয়া মানুষের সংখ্যা নিছক কম নয়। বর্তমানে এসব লেনদেনের ক্ষেত্রে তথ্য ও অর্থের নিরাপত্তা একটি চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। নিরাপদ অনলাইন লেনদেন করতে হলে কিছু বিষয়ে সতর্ক থাকা খুবই জরুরি।

১। পিন নাম্বার গোপন রাখতে হবে

আপনার যেকোনো একাউন্টের পিন নাম্বারটি একটি গোপন সংখ্যা যা আপনি ছাড়া আর কেউ জানবে না। কেউ পিন নাম্বার এবং একাউন্ট নাম্বার জেনে গেলে একাউন্টের নিরাপত্তা নষ্ট হয়। সে ব্যক্তি চাইলে আপনাকে বড় ধরণের আর্থিক ঝামেলার মধ্যে ফেলে দিতে পারে। তাই কেউ ফোন করে কিংবা মোবাইলে মেসেজ পাঠিয়ে যদি আপনার একাউন্টের গোপন পিন নাম্বার জানতে চায় তাহলে ভুলে পিন নাম্বার বলবেন না। অনেকে ফোন করে বিকাশ কিংবা নগদ অফিসে থেকে ফোন করছে এমন পরিচয় দিয়ে পিন নাম্বার চাইতে পারে, একটুও বিভ্রান্ত না হয়ে ফোন কেটে দিন। 

২। ওটিপি বা ওয়ান টাইম পাসওয়ার্ড কাউকে দেয়া যাবে না

বিভিন্ন একাউন্টে একাউন্ট খোলা, ভ্যারিফিকেশন ইত্যাদি কাজে মোবাইলে মেসেজ দিয়ে বা ইমেইল করে ওটিপি পাঠানো হয়। যা টু ফ্যক্টর অথেনটিকেশনের (দুই ধাপে পরিচয় যাচাই) মত কাজ করে। এই ওটিপি অন্য কাউকে দিয়ে দিলে সে আপনার একাউন্টের টাকা ট্রান্সফার করে নিতে পারে।

৩। একাউন্ট নাম্বার কোন মাধ্যমে শেয়ার করার ব্যাপারে সতর্ক থাকুন

কোন অনলাইন প্লাটফর্মে একাউন্ট নাম্বার, পিন নাম্বার ইত্যাদি শেয়ার করা থেকে বিরত থাকুন। এধরণের গোপনীয় তথ্য অনলাইনে শেয়ার করলে নিরাপদ জায়গা বা ব্যক্তির সাথে করতে হবে। প্রয়োজন শেষে শেয়ারকৃত তথ্য মুছে ফেলতে হবে।

৪। খুব কাছের কাউকেও একাউন্টের গোপনীয় তথ্য দেয়া যাবেনা

আপনার ভাই-বোন, বন্ধুকে বা কাছের কাউকেই একাউন্টের পিন নাম্বার বলবে না। তথ্যের গোপনীয়তা যত বেশি থাকবে, আপনার একাউন্ট তত বেশি নিরাপদ থাকবে। এই ব্যাপারটা একেবারে ব্যক্তিগত বিষয়। ব্যক্তিগত না রাখতে পারলে বিপদে পরবেন।

৫। কোন অনলাইন পেমেন্ট গেটওয়ের মাধ্যমে লেনদেন করলে ঠিক ওয়েবসাইটেই তথ্য দিচ্ছেন কিনা খেয়াল করুন

অনলাইন লেনদেনের বড় একটি অংশ হয়ে থাকে অনলাইন গেটওয়ের মাধ্যমে। এখানে একাউন্ট নাম্বার, পিন নাম্বার, ওটিপি ইত্যাদি দিতে হয়। যে সাইটে এসব তথ্য দিচ্ছেন লক্ষ্য করুন যে সাইটটা কোন ফিশিং সাইট কি না। ওয়েবসাইটটির এড্রেস দেখে যদি কারো সন্দেহ হয় তাহলে সেখানে একাউন্ট সম্পর্কিত তথ্য দেয়া থেকে বিরত থাকুন।

 

৬। একাউন্ট বন্ধ হয়ে গেছে বা কোন ব্যাংকিং অফিস থেকে ফোন দিয়ে গোপনীয় তথ্য চাইলে সতর্ক থাকতে হবে 

একাউন্ট বন্ধ হয়ে যাবার কথা বলে একটি চক্র আমাদের টাকাপয়সা নিজের একাউন্টে নিয়ে নিতে চায়। এদের থেকে সতর্ক থাকবেন। এরকম কেউ ফোন করলে সতর্ক হয়ে যাবেন। এ ধরণের লোক প্রতারক হওয়াই স্বাভাবিক। কারণ কোন অনলাইন ব্যাংকিং কর্তৃপক্ষ থেকে আপনাকে কখনোই কল করে এধরণের কথা বলবে না। ওটিপি বা পিন নাম্বার তো চাইবেই না।

৭। একাউন্টের তথ্য গোপন কোথাও সংরক্ষণ করে রাখা

অনেক সময় আমরা একাউন্টের পাসওয়ার্ড, পিন নাম্বার, ইমেইল এড্রেস ভুলে যাই। সে ঝামেলা এড়িয়ে চলার জন্য কোথাও এসব লিখে রাখুন। কিন্তু খেয়াল রাখবেন যেখানে লিখে রাখছেন তা অন্য কারো হাতে পরার সম্ভাবনা আছে কিনা।

৮। লেনদেনের ক্ষেত্রে যেকোনো সমস্যা হলে, সন্দেহ হলে ব্যাংক বা অনলাইন মাধ্যমের কর্তৃপক্ষকে জানান

লেনদেন সম্পর্কিত যেকোনো ধরণের সন্দেহ, প্রশ্ন বা বাড়তি কিছু জানতে চাওয়ার জন্যে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকে যোগাযোগ করুন। পরিচিত/ অপরিচিত মানুষদের থেকে ভুল এবং অপ্রয়োজনীয় জিনিস জেনে নিজে থেকেই একাউন্টের নিরাপত্তা বিঘ্নিত করবেন না। সমস্যা সম্পর্কে কর্তৃপক্ষকে জানানোর ফলে ভবিষ্যতে এধরনের সমস্যায় পরার হার কমে যাবে। এই ব্যাপারে সাথে সাথেই বিশ্বাসযোগ্য কারো সাথে আলাপ করে পদক্ষেপ নিলে অনেকসময় এসব প্রতারক চক্র থেকে বাঁচা যায়।