অনলাইনে শিশুর নিরাপত্তা, সুরক্ষা ও গোপনীয়তা বজায় রাখার কৌশল

অনলাইন মাধ্যমের অনেক সুবিধার জন্য এই মাধ্যম প্রচুর ব্যবহার করতে হয়। এর নানামুখী সুবিধার পাশাপাশি এর কিছু অসুবিধা আছে, ঝুঁকি আছে। এসব থেকে প্রাপ্তবয়স্ক মানুষও অনেক সময় নিজেকে বাঁচিয়ে রাখতে পারেন না। শিশুদের জন্যে এই মাধ্যমে ঝুঁকি আরও বেশি। একজন অভিভাবক যথাযথ ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে শিশুকে এসব ঝুঁকি থেকে নিরাপদ রাখতে পারেন। চলুন জেনে নেয়া যাক অনলাইনে শিশুকে নিরাপদ রাখার কিছু কৌশল –

 ১। শিশুর ডিজিটাল ফুট-প্রিন্ট কম রাখুন

ডিজিটাল ফুট-প্রিন্ট মানে অনলাইনে কারো ব্যক্তিগত কোন চিহ্ন, সেটা হতে পারে ছবি, ঠিকানা, স্কুল-কলেজের নাম ইত্যাদি। অনলাইনে শিশুর স্কুল, কলেজ, ঠিকানা, ফোন নাম্বার শেয়ার না করাই ভালো। ছবিও যত কম ব্যবহার করা যায় ততই ভালো। কারণ এসব শেয়ার করার কারণে অনেকের কাছে আপনার শিশুর তথ্য চলে যাবে। সেক্ষেত্রে কেউ যদি তার ক্ষতি করতে চায় তাহলে প্রয়োজনীয় সকল তথ্য অনলাইন থেকে পেয়ে যাবে।

 ২। আপনার ও শিশুর অনলাইন প্রাইভেসি সেটিংস ঠিক রাখা

অনলাইনে আপনার ও আপনার সন্তানের প্রাইভেসি সেটিংস পাবলিক দিয়ে না রাখাই ভালো। তাহলে আপনার অনুমোদিত মানুষের বাইরের লোকজনও আপনার শেয়ারকৃত সকল তথ্য দেখতে ও শেয়ার করতে পারবে। সেক্ষেত্রে এমন অনেক মানুষের কাছে আপনার সন্তানের তথ্য চলে যাবে যারা আসলে শিশুদের জন্য ক্ষতির কারণ হতে পারে। এসব ছবি নিয়ে তারা বিভিন্ন ধরনের কুরুচিপূর্ণ কন্টেন্ট তৈরি করতে পারে। বিভিন্ন আজেবাজে পেইজ, গ্রুপে ছবি শেয়ার দিতে পারে যা অনলাইনে শিশুর নিরাপত্তা নষ্ট করবে। সেজন্য প্রাইভেসির ব্যাপারটা খুব খেয়াল করে ঠিক করতে হবে।

 ৩। প্যারেন্টাল কন্ট্রোল ব্যবহার

শিশুর ডিভাইসে প্যারেন্টাল কন্ট্রোল অন রাখুন। তাহলে শিশুর জন্য অনুপযোগী ওয়েবসাইট, অ্যাপ, গেইম, কন্টেন্ট থেকে তাদের দূরে রাখতে পারবেন। এছাড়াও প্যারেন্টাল কন্ট্রোল অ্যাপ ব্যবহার করে শিশুর অনলাইন এক্টিভিটি মনিটর করতে পারবেন সহজেই। এই নিয়ন্ত্রণগুলো শিশুকে নিরাপদ রাখার জন্য জরুরি। অনেক সময় শিক্ষার প্রয়োজনে শিশুকে ডিভাইস দেয়ার প্রয়োজন পরে সেক্ষেত্রে সহজেই অনলাইন মাধ্যমের ঝুঁকিগুলো থেকে তাদের নিরাপদ রাখার জন্য এই অ্যাপ ব্যবহার করা যায়। প্যারেন্টাল কন্ট্রোলের সুবিধা হলো এসব সেটিংস পাসওয়ার্ড দিয়ে লক করে রাখা যায়। ফলে শিশু চাইলেও অভিভাবকের অনুমোদন ছাড়া এই সেটিংস পরিবর্তন করতে পারে না।

 ৪। সেফ সার্চ অন রাখা

সার্চ ইঞ্জিন যেমন – গুগল, পিপীলিকা, Bing এ কোন কিছু সার্চ করলে অনেক ধরনের তথ্য সামনে আসে। একজন শিশু যখন সার্চ করে তার জন্য বয়স উপযোগী কন্টেন্ট সামনে আসে না। অনেক অযাচিত কন্টেন্টও চলে আসে। আবার ভায়োলেন্ট কন্টেন্ট আসলে তা শিশুকে মানসিক ভীতিতে ফেলে দিতে পারে। এ ধরনের পরিস্থিতি এড়ানোর জন্য সেফ সার্চ সেটিংস অন করে রাখুন। তাহলে এমন ঝুঁকিগুলো থেকে শিশুকে নিরাপদে রাখতে পারবেন।

 ৫। শিশুকে সাইবার নিরাপত্তা সম্পর্কে জানানো

ডিজিটাল মাধ্যম ব্যবহারের ক্ষেত্রে হ্যাকিং, ফিশিংসহ ইত্যাদির কারণে অনেক সময় আমাদের অ্যাকাউন্ট ঝুঁকির মধ্যে পরতে পারে। আবার এই মাধ্যমের ঝুঁকি সম্পর্কে না জানলে বিভিন্ন ধরনের বুলিং, সাইবার হ্যারেজমেন্ট, প্রতারণা, জালিয়াতি শিশুর জন্য বড় বিপদের কারণ হয়ে যেতে পারে। শিশুরা সহজেই অন্যকে বিশ্বাস করে ফেলে। আবার জানাশোনা কম থাকায় কোন তথ্য যাচাই করাও তাদের জন্য সম্ভব হয় না। সেক্ষেত্রে ডিজিটাল ডিভাইস দেয়ার সাথে সাথে শিশুকে সাইবার নিরাপত্তার বিষয়ে তার জন্য বোধগম্য ভাষায় বিস্তারিত জানানো খুব জরুরি।

 ৬। অনলাইন অ্যাক্টিভিটির বিষয়ে পরিবারে আলোচনার ক্ষেত্র উন্মুক্ত রাখুন

পরিবারে যদি উন্মুক্ত আলোচনার পরিবেশ থাকে তাহলে শিশু তার অনলাইন অ্যাক্টিভিটি সম্পর্কে অভিভাবককে জানাতে সংকোচ করবে না। এসব তথ্য জানা থাকলে শিশুর নিরাপত্তা নিশ্চিত

করা সহজ হয়ে যায়। কিন্তু শিশু যদি উন্মুক্ত পরিবেশ না পায় তাহলে সে নিজে থেকে এসব তথ্য

শেয়ার করবে না।

 ৭। শিশু কোন বিপদে পড়লে তার পাশে থাকুন

অনলাইন মাধ্যমে একটি শিশু বিভিন্নভাবে বিপদে পড়তে পারে। সেসব বিপদে শিশুর পাশে থাকুন, তাদের উপর দোষ না চাপিয়ে তার পক্ষে থেকে পরিস্থিতি সামাল দিন। তাহলে শিশু আপনার উপর ভরসা করবে এবং পরে যেকোনো বিপদে আপনার সহযোগিতা চাইবে। কিন্তু তাকে দোষী করলে পরের কোন বিপদে কিছু জানতেই পারবেন না, এবং শিশু মানসিকভাবে ভেঙে পড়তে পারে।