শিশু কী কী কাজে ডিভাইস ও ইন্টারনেট ব্যবহার করতে পারে সে সম্পর্কে জানা

এই সময়ে শিশুদের বিভিন্ন কাজে ডিজিটাল ডিভাইস এবং ইন্টারনেট ব্যবহারের প্রয়োজনীয়তা অনেক বেড়ে গেছে। শিশুদের ডিভাইস দেয়ার সাথে সাথে এসবের ব্যাপারে আসক্তি একটি সমস্যা হয়ে দাঁড়াতে পারে আবার এসব মাধ্যম ব্যবহার করে শিশু অনেক সময়ই বিভিন্ন অসুবিধায় পরতে পারে। সেজন্য শিশুকে এসব প্রয়োজনীয় ডিভাইস দেয়ার পাশাপাশি অভিভাবক হিসেবে আপনার উচিত এগুলো সম্পর্কে পর্যাপ্ত ধারণা রাখা। তাহলে অতিরিক্ত ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ করার পাশাপাশি এসব ব্যবহারে শিশুকে সহযোগিতা করতে পারবেন। চলুন জেনে নেয়া যাক শিশুদের কোন কাজে কী কী হার্ডওয়ার, সফটওয়্যার এবং অ্যাপ্স সে সম্পর্কে।

১। শিক্ষা

শিক্ষা কার্যক্রমে ডিজিটাল ডিভাইস ও ইন্টারনেটের ব্যবহার এখন বহুল প্রচলিত। অনলাইনে পরীক্ষার ফলাফল দেখা, ক্লাস করা, পরীক্ষা দেয়া, বাড়ির কাজ জমা দেয়া, বই ডাউনলোড করা, স্কুল-কলেজের বাইরে কোন কোর্স করার মত কাজগুলো করার প্রয়োজন পড়ে। সেসব কাজের জন্য জুম, গুগল মিট, স্ট্রিমইয়ার্ড, ডকুমেন্ট স্ক্যানার, গুগল ক্লাসরুম, ইন্টারনেট ব্রাউজার এসব সফটওয়্যার এবং কিশোর বাতায়ন, খান একাডেমী, টেন মিনিটস স্কুল, বহুব্রীহি, ইউটিউব, মাধ্যমিক-উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষাবোর্ড, NCTB- এর ওয়েবসাইট ব্যবহার করার প্রয়োজন পড়ে।

-  অনলাইনে ক্লাস করার জন্য জুম (Zoom), গুগল মিট (Google Meet), স্ট্রিমইয়ার্ড (Streamyard), গুগল ক্লাসরুম (Classroom), টিচমিন্ট (Teachmint) এসব অ্যাপ্স বা সফটওয়্যার প্রয়োজন হয়।

-    অনলাইনে পরীক্ষা দেয়া, বাড়ির কাজ জমা দেয়া ও পরীক্ষার জমা দেয়ার জন্য গুগল মিট, জুম, গুগল ক্লাসরুম, টিচমিন্ট এসব অ্যাপ্স ব্যবহার করার প্রয়োজন হয়। পরীক্ষার খাতা স্ক্যান করার জন্য ডকুমেন্ট স্ক্যানার ব্যবহার করতে হয় যেমন ক্যামস্ক্যানার হচ্ছে এমন একটি স্ক্যানার।

-  বই ডাউনলোড করার জন্য NCTB- এর ওয়েবসাইট ব্যবহার করতে হয়। এই ওয়েবসাইটে প্রথম থেকে দশম পর্যন্ত সকল ক্লাসে সব বই পিডিএফ ফাইল আকারে দেয়া আছে। কেউ ডিভাইসে পড়তে চাইলে বা বই হারিয়ে ফেললে এই ওয়েবসাইট থেকে খুব সহজেই ডাউনলোড করে নিতে পারবে।

-         পরীক্ষার ফল দেখার জন্য শিক্ষা বোর্ডের ওয়েবসাইটে গিয়ে রোল নাম্বার এবং রেজিস্ট্রেশন নাম্বার দিলে ফলাফল পেয়ে যাবেন।

- অনলাইনে ক্লাসের পড়ার বাইরেও কোন কোর্স করার জন্য খান একাডেমী, টেন মিনিটিস স্কুল, ঘুড়ি লার্নিং, বহুব্রীহি, ইউটিউব চ্যানেল এর মত ওয়েবসাইটগুলো ব্যবহার করতে হবে।

 ২। বিনোদন

শিশুদের বিনোদনের জন্য অনলাইন প্লাটফর্মে বিভিন্ন ধরনের কার্টুন, শিশুতোষ সিনেমা, নাটক দেখা যাবে। সেজন্য কম্পিউটার ও ইন্টারনেট সংযোগ এর সাথে সাথে যে ওয়েবসাইটে দেখবে সেখানে একাউন্ট করতে হবে। আবার ইউটিউবে দেখলে শুধুমাত্র গুগল একাউন্টে লগইন করেই সব দেখা যাবে। তবে শিশুদের ক্ষেত্রে রয়েছে ইউটিউব কিডস যা কেবল শিশুদের উপযোগী কন্টেন্ট এর জন্য তৈরি। গেইমস খেলার জন্য সেসব গেইমসের ওয়েবসাইট এবং অ্যাপ ব্যবহার করতে হবে।

৩। যোগাযোগ

সহপাঠী ও শিক্ষকদের সাথে যোগাযোগ করার জন্য ফেসবুক, টুইটার, হোয়াটসঅ্যাপ, টেলিগ্রাম এসব অ্যাপ্স ব্যবহার করতে হয়। বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব ফেসবুক পেইজ/গ্রুপ আছে যেখান থেকে শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন ধরনের তথ্য পেয়ে থাকে। বিভিন্ন ব্যাচের জন্য আলাদা গ্রুপ থাকে এমন, সেক্ষেত্রে একসাথে আলোচনা করে পড়াশোনা করা, পড়ায় কোন সমস্যা হলে অন্যদের থেকে সহযোগিতা নেয়া সম্ভব এখানে।

৪। সহ-শিক্ষা কার্যক্রম

শিশুরা বিভিন্ন ধরনের সহশিক্ষা কার্যক্রমে অংশ নেয় তার মধ্যে আছে বিতর্ক, নাচ, গান, আবৃত্তি, ফটোগ্রাফি ইত্যাদি। এসব কর্মকাণ্ডের জন্যেও ডিজিটাল ডিভাইস এবং ইন্টারনেট বহুল ব্যবহার হচ্ছে। বিতর্কের জন্য একটি অ্যাপ আছে যার নাম ডিসকর্ড। যেখানে সরাসরি বিতর্ক করার মত করে অনলাইনের অডিও/ভিডিও কলে বিতর্কে অংশ নেয়া যায়। এছাড়াও ছবি আঁকা, গান, নাচ, ফটোগ্রাফি এসব কর্মকাণ্ডের জন্যেও বিভিন্ন ধরনের অ্যাপ্স প্রয়োজন।

৫। অনলাইনে তথ্যপ্রাপ্তি

যেকোন কিছু বিষয়ে না জানলে অনলাইনে সার্চ করে এসব তথ্য জেনে নেয়া যায়। শিক্ষা বা অন্য যেকোন বিষয়ে না জানলে শিশুরা ডিভাইস ব্যবহার করে কাঙ্ক্ষিত তথ্যটি খুঁজে বের করতে পারে। সেজন্য ইন্টারনেট সংযোগসহ ফোন বা কম্পিউটারের মাধ্যমে ইন্টারনেট ব্রাউজার ব্যবহার করতে হয়। কয়েকটি প্রয়োজনীয় সার্চ ইঞ্জিন হচ্ছে গুগল, Bing এবং পিপীলিকা।

৬। আবেদন,ভর্তি ও বেতন পরিশোধ

 স্কুল-কলেজে ভর্তি হবার আবেদন এবং সেখানে ভর্তি হবার জন্যে সেসব স্কুল-কলেজের ওয়েবসাইটে আবেদন করা, ভর্তি হওয়া এবং মাসিক বেতন দেয়ার কাজগুলোও করা সম্ভব। বেতন পরিশোধের জন্যে ডেবিট/ক্রেডিট কার্ড বা মোবাইল ব্যাংকিং অপশন ব্যবহার করা যায়।

৮। অনলাইন কেনাকাটা

প্রয়োজনীয় বিনোদন ও শিক্ষা উপকরণ কেনার জন্যে বিশেষ করে শিশুদের জন্যে অনলাইন বেশ ভালো একটি মাধ্যম। শহরের রাস্তার যাতায়াতের সমস্যা, অনিরাপত্তার মধ্যে শিশুকে বাইরে না নিয়ে প্রয়োজনীয় জিনিস অনলাইনে কেনার ব্যবস্থা করতে পারেন। সেজন্য দারাজ, অথবা ডট কম, রকমারি ডট কম, বইয়ের জাহাজ ইত্যাদি ওয়েবসাইট আছে।

 ৯। সৃজনশীল কাজে

 শিশুরা বিভিন্ন ধরণের সৃজনশীল কাজে  ডিজিটাল ডিভাইস ব্যবহার করে। যেমন কেউ কেউ গ্রাফিক্স ডিজাইন করে, কেউ প্রোগ্রামিং, কেউ তার নাচ-গান-আবৃত্তি রেকর্ড করে, কেউ বা লেখালেখি করে। এ ধরনের কাজের জন্য বিভিন্ন ধরণের সফটওয়্যার ও অ্যাপ ব্যবহার করার প্রয়োজন পরে। গ্রাফিক্স ডিজাইনের জন্যে Adobe illustrator, Adobe Photoshop ব্যবহার করা হয়। প্রোগ্রামিং এর জন্য সেসব সফটওয়্যার যেমন C++, python, r ইত্যাদি। লেখালেখির জন্য কিছু নোট থাকে মোবাইলে এসব নোটের পাশাপাশি মাইক্রোফসট ওয়ান নোট, গুগল ডক, মাইক্রোফট ওয়ার্ড এসব ব্যবহার করা হয়। রেকর্ড করার জন্যে ফোনের ভিডিও ক্যামেরা, অডিও রেকর্ডার ব্যবহার করতে হবে। সেসব রেকর্ড করে উপস্থাপন উপযোগী করে তোলার জন্যেও কিছু ভিডিও এডিটিং সফটওয়্যার ব্যবহার করা যায়।