শিশুর জন্য ডিজিটাল ঝুঁকিসমূহ (শারীরিক, মানসিক, আর্থিক, সামাজিক), নিরাপত্তা এবং তা জানানোর কৌশল

এই ডিজিটাল সময়ে এসে বাস্তব জীবনের ঝুঁকির পাশাপাশি ডিজিটাল জগতের কিছু ঝুঁকি সম্পর্কে ধারণা রাখা অতীব জরুরি। এসব ঝুঁকি শিশুদের অনলাইন মাধ্যম ব্যবহারের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়াচ্ছে। শিশুদের ক্ষেত্রে সাধারণত তাদের অধিক বিশ্বাস প্রবণতা এবং অনভিজ্ঞতাকে কাজে লাগানো হয়ে থাকে। আজকের দিনে শিশুর জন্য অনলাইন মাধ্যম বা ডিজিটাল ডিভাইসের ব্যবহার এড়ানো সম্ভব নয়। তাই এর ব্যবহার সম্পর্কে জানার পাশাপাশি একজন অভিভাবক হিসেবে এই মাধ্যমের ঝুঁকিগুলো সম্পর্কে ধারণা থাকলে এবং সে সম্পর্ক শিশুকে সতর্ক করে দিলে এসব ঝুঁকি থেকে দূরে থাকা সহজ হবে।

 কয়েকটি ক্ষেত্রে ডিজিটাল ঝুঁকি

 শারীরিক ঝুকি: ইন্টারনেটের অত্যন্ত বেশি আসক্তি শারীরিক ক্ষতির কারণ।  আমাদের শিক্ষা  ব্যবস্থায় কেবল পড়াশোনা নয়, শারীরিক কর্মকাণ্ডও অন্তর্ভুক্ত থাকে। আর সে কারণেই স্কুল-কলেজে একটি নির্দিষ্ট সময়ে বিরতি বা টিফিন টাইম দেয়া হয়। তবে ইন্টারনেট এমন একটি গ্লোবাল সিস্টেম যেখানে এর ব্যবহারকারীদের কোনো শারীরিক বা কায়িক পরিশ্রম করার দরকার পড়ে না। তাই যে মানুষ বেশি সময় ইন্টারনেট ব্যবহার করে সে তুলনামূলকভাবে খেলাধুলা, ব্যায়ামের মতো শারীরিক কার্যক্রম কম করে থাকে। আর এভাবে ইন্টারনেটের অতিরিক্ত ব্যবহার মানুষকে শারীরিকভাবে কম সক্রিয়তার দিকে নিয়ে যায়। এর ফলে শিশুর সঠিক শারীরিক বিকাশ ব্যহত হতে পারে। অতিরিক্ত ইন্টারনেট ব্যবহারের কারণে নিদ্রাহীনতা বা ইনসমনিয়া হতে পারে। তাছাড়া বেশি সময় ধরে ডিভাইস ব্যবহারে পিঠ ও ঘাড়ে ব্যথা, চোখের সমস্যাসহ আরও কিছু শারীরিক জটিলতা দেখা দিতে পারে।

 

মানসিক ঝুকি: একজন শিশুর মধ্যে ইন্টারনেটে প্রাপ্ত বয়স্কদের জন্য নির্ধারিত চ্যাট রুম এবং সাইবার পর্ণের প্রতি আকর্ষণ বিশেষভাবে বেড়ে যায়। তার চিন্তা-ভাবনায় স্থান করে নেয় এ ধরনের নগ্ন ও বিকৃত রুচির সাইটগুলো। সাধারণত প্রথমদিকে কৌতূহল থাকলেও বেশিরভাগ মানুষই পরবর্তীতে এগুলোতে আর আকর্ষণ বোধ করে না। এসবের প্রতি কারো কৌতূহল ও আকর্ষণ যদি স্থায়ীরুপ লাভ করে তখনই সমস্যা। এছাড়াও অনলাইনে নৃশংস বা মারামারি, হানাহানির ভিডিও দেখলে শিশু মানসিক ঝুকির মধ্যে পড়তে পারে। এমনকি যে কোন ধরনের ঋণাত্মক ভিডিও যেমন ধর্ষণ, বন্যা, দাবানল ইত্যাদি শিশুর মনোজগতে খারাপ প্রভাব ফেলতে পারে।   

 

আর্থিক ঝুঁকি: অনলাইনেশিশুর বেশী আকর্ষণ থাকে বিভিন্ন ধরণের অনলাইন গেমস এর প্রতি। ভালো মানের অনলাইন গেমস গুলো ক্রয় করে তারপর ব্যবহার করা যায়। এর ফলে আর্থিক ঝুঁকির সম্ভাবনা তৈরী হয়। এ ছাড়াও বিভিন্ন সাইটে ঘোরাঘুরি করতে গিয়ে শিশু না বুঝেই অনেক অপ্রয়োজনীয় কেনাকাটা করে ফেলতে পারে। এমন কি বিভিন্ন প্রয়োজনীয় কেনাকাটা করতে গিয়েও শিশু প্রতারণার শিকার হতে পারে।  ইন্টারনেট ব্যবহারের জন্য শিশুদের অর্থ খরচ করতে হয় । বেশী বেশী সময় ইন্টারনেটে থাকার জন্য বেশী ডাটা ক্রয় করার প্রয়োজন পরে । আবার অনেক ওয়েব সাইট রয়েছে যাদের ভিডিও বা বিভিন্ন তথ্য দেখার জন্য টাকা প্রদান বা সাবস্ক্রাইব করতে হয়। এভাবে সচেতনার অভাবে শিশু বিভিন্ন রকম আর্থিক ঝুঁকির সম্মুখীন হতে পারে। 

 

সামাজিক ঝুঁকি:  বাস্তব জীবনে সমস্যা তৈরি হতে পারে। সুখ-দুঃখ, হাসি-কান্না, আনন্দ-বেদনার এইসব দিনরাত্রি নিয়ে আমাদের জীবন। সব দুঃখ-কষ্টকে সবাই একইভাবে মোকাবেলা করতে পারে না। ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক এবং পেশাগত জীবনে সমস্যা আসতে পারে। অনেকে এইসব দুঃখ-কষ্ট ও সমস্যাকে ভুলে থাকার জন্য ইন্টারনেটকে বিকল্প হিসেবে বেছে নেয়। এভাবে বাস্তব জীবনের সমস্যাকে ভুলতে গিয়ে আরও একটি সমস্যায় পতিত হয়, যার নাম 'ইন্টারনেট আসক্তি'।

 

ডিজিটাল/অনলাইন ঝুঁকি এড়ানোর জন্য যা করা উচিত:

১।  আপনার বাড়িতে ডিজিটাল ঝুঁকি সম্পর্কে আলোচনা করা উচিত। ঘন ঘন আপনার আপনার সন্তানদের নিয়ে বসা উচিত এবং তাদের এইসব নিয়ে সচেতন করতে হবে। আপনার সন্তানের অ্যাপগুলো আপনাদের সবসময় নিরীক্ষণ করতে হবে যে তারা কোন ধরনের ডিজিটাল ঝুঁকির সম্মুখীন হচ্ছে কিনা।

২।  ছবি শেয়ার করার সময় আপনাকে সচেতন থাকতে হবে, আপনাকে ভাবতে হবে ছবি অপরিচিতদের সামনে প্রকাশ করা নিরাপদ কিনা? এ বিষয়গুলোও শিশুদেরকেও নিয়মিত অবহিত করা দরকার। 

৩।  কিছু ব্যক্তিগত এবং সনাক্তকারী বিষয় যেমন: জন্ম তারিখ, বাড়ির ঠিকানা, জন্ম নিবন্ধন নম্বর ইত্যাদি শেয়ার না করাই উচিত।

৪।  আপনি যখন বুঝতে পারবেন যে আপনার শিশু মানসিকভাবে সমস্যাগ্রস্ত তখন তাদের সাথে পারস্পরিক কথোপকথন করু। তারা কি বলতে চায় তাদের কি সমস্যা শুনুন এবং তার সমাধান দিন। আশা করা যায় ডিজিটাল ঝুঁকি এড়ানো যাবে।

৫।  শিশুরা কখনো কখনো টেক্সট করা, গেম খেলা , ইউটিউবে  ভিডিও দেখে অনেক সময় ব্যয় করে। এতে তদের ঘুমের ক্ষতি হয়। তাদের ঘুমের যাতে ক্ষতি না হয় সেই দিকে অভিভাবকদের নজর দিতে হবে যেন তারা সঠিক সময়ে খাওয়াদাওয়া, ঘুম, নৈমিত্তিককাজ করে।

৬।  আপনার শিশুদের সচেতন করুন যেন তারা তাদের ব্যক্তিগত তথ্য অনলাইনে বা ঝূকিপূর্ণ উপায়ে শেয়ার না করে। তাদেরকে অনলাইনে ঝুঁকিপূর্ণ আচরণ, কোন ধরনের তথ্য কোথায় শেয়ার করা ঝুঁকিপূর্ণ এসব বিষয়ে জানান এবং নিয়মিত মনে করিয়ে দিন।