শিশুর জন্য ডিভাইস নির্বাচনের ক্ষেত্রে বিবেচ্য বিষয়

এই সময়ে অনেক কম বয়সেই শিশুরা ডিজিটাল ডিভাইস ব্যবহার করছে। শিশুদের জন্য ডিভাইস নির্বাচনের জন্য আলাদা কিছু বিষয় মাথায় রাখা প্রয়োজন। কেননা প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য ডিভাইস নির্বাচন আর শিশুদের জন্য ডিভাইস নির্বাচন এক নয়। শিশুদের ব্যবহার, মনস্তত্ত্ব, আচরণ এসব বিষয় বিবেচনায় রেখে ডিভাইস বাছাই না করলে সে ডিভাইস ব্যবহার শিশুর জন্য সুবিধাজনক নাও হতে পারে।

 

শিশুকে ডিভাইস দেয়ার সঠিক বয়স কোনটি?

এই বিষয়টা আসলে শিশুর মানসিক পরিপক্বতার উপরে নির্ভর করে। অনেক শিশু কম বয়সেই ডিভাইসের ব্যাপারে জানে, নিয়ন্ত্রিত ব্যবহার করতে পারে। কিন্তু অনেকেই আছে যারা এই কাজগুলোতে পারদর্শী নয়। অবস্থা যাই হোক, কোন অবস্থাতেই শিশুকে ২ বছর বয়সের আগে ডিভাইস দেওয়া যাবে না। ২ বছরের পরেও ডিভাইস দেয়ার আগে নিশ্চিত হয়ে নিন যে এই ডিভাইসটি শিশুটির প্রয়োজন কি না। প্রয়োজন না হলে শিশুকে ডিভাইসের সংস্পর্শে আনার কোন প্রয়োজন নেই। শিশু যেমনই বা যে বয়সেরই হোক ডিভাইস  আসক্তি তৈরি হতে পারে যেমনটা বড়দের হয়। আবার শিশুর একাডেমিক প্রয়োাজনের আগে ডিভাইস ব্যবহারের প্রয়োজন হলে শুধু বড়দের সাথে বসে কিছুক্ষণের জন্য (অবশ্যই ২ বছরের আগে নয়) ব্যবহার করতে পারে। সেক্ষেত্রে ২ বছর বয়সের পর দৈনিক সর্বোচ্চ ৩০ মিনিট এবং ৫ বছর বয়সের পর ৬০ মিনিট দেখতে বা ব্যবহার করতে পারে। শিশুকে ডিভাইস দেয়ার আগে নিজেকে এই প্রশ্নগুলো করুন তাহলে ডিভাইস দেয়ার সময় হয়েছে কিনা তা বুঝতে পারবেন –

 

১। ডিভাইস দেয়ার উপযুক্ত বয়স কোনটি? এই বয়স হয়েছে কী?

 

২। অনলাইনের ঝুঁকি থেকে নিরাপদে থাকতে পারবে তো?

৩। কোন কোন কাজে ডিভাইসটি ব্যবহার করবে?

৪। ডিভাইসটি কি আসলেই প্রয়োজন?

৫। ডিভাইস আসক্তির জন্য পড়াশোনা ও ব্যক্তিজীবনের ক্ষতি হবে না তো?

 

শিশুদের জন্য ডিভাইস নির্বাচনে বিবেচ্য বিষয়

 

কোন ধরনের ডিভাইস দিবেন? (যেমন - কম্পিউটার, ফোন, ট্যাব)

এগুলোর মধ্যে কোন ডিভাইস দিবেন সেটি প্রয়োজনের উপরে নির্ভর করে। শিশুর কাছে জানতে চান তার কোন কাজের জন্য ডিভাইস প্রয়োজন অথবা অভিভাবক হিসেবে আপনি যখন বুঝতে পারবেন যে তার কোন নির্দিষ্ট কাজের জন্য ডিভাইস প্রয়োজন তখন সেই অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নিন। যদি তার কোডিং, প্রোগ্রামিং বা ডিজাইন করার মত জটিল কাজ করার প্রয়োজন হয় তাহলে তাকে কম্পিউটার কিনে দিতে পারেন। অন্যথায় মোবাইল ফোন বা ট্যাবলেট কিনে দিতে পারেন। ই-বুক পড়া, গেইম খেলা, কার্টুন দেখার মত কাজগুলোর জন্য ট্যাব ভালো অপশন। অভিভাবকরা সাধারণত এমন অ্যাপ চান যেগুলো শিক্ষামূলক, বাচ্চার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের জন্য প্রয়োজন হবে। কিন্তু শিশুদের প্রধান আগ্রহ হচ্ছে বিনোদন ও খেলা কেন্দ্রিক অ্যাপের দিকে। এই দুই চাওয়াকে মাথায় রেখে ডিভাইসের অ্যাপ নির্বাচন প্রয়োজন। ডিভাইসের ধরন প্রয়োজন অনুযায়ী আলোচনা করে ঠিক করে নিবেন।

 

ডিভাইসটি পানি নিরোধক (water-resistant) কিনা

শিশুদের ব্যবহৃত ডিভাইস পানিতে পড়েযাবার সম্ভাবনা থাকে বা ডিভাইসের উপরে তরল কিছু পড়ার সম্ভাবনা থাকে। সেজন্য শিশুদের ডিভাইস পানি নিরোধক হওয়াটা জরুরি। ডিভাইস যদি পানি নিরোধক না হয় সেক্ষেত্রে ডিভাইসের কভারটা পানি নিরোধক দেখে কিনুন।

 

ডিভাইসটি টেকসই কিনা

শিশুদের হাত থেকে ডিভাইস পরে যাওয়া বা কোথাও আঘাত লেগে ভেঙে যাবার প্রবণতা থাকে। সেজন্য টেকসই হবে এমন ডিভাইস নির্বাচন করুন। পাশাপাশি ডিভাইসে ভালো ব্যাক-কভার এবং স্ক্রিনে স্ক্রিন প্রটেক্টর লাগিয়ে দিলে হাত থেকে পরে গেলেও ভাঙার সম্ভাবনা কম থাকে।

 

ডিভাইসের স্টোরেজ

শিশুদের জন্য কেনা ডিভাইসগুলোতে স্টোরেজ বেশি হওয়া প্রয়োজন। কেননা তারা অনেক অ্যাপ ইন্সটল করে ডিভাইসের স্টোরেজ দ্রুতই ফুল করে দিতে পারে। পাশাপাশি ছবি, ভিডিও, গেইম মেমোরিতে রাখার জন্য পর্যাপ্ত স্টোরেজের প্রয়োজন হয়।

 

ডিভাইসের সাইজ কেমন হবে?

ডিভাইসের সাইজ খুব বেশি বড় বা ছোট না হওয়াই ভালো। বেশি বড় হলে ডিভাইস ব্যবহার করা শিশুর জন্যে অসুবিধাজনক হয়ে যায়। আবার বেশি ছোট হলে চোখের উপরে বেশি চাপ পরে যায়। সেজন্য ডিভাইসের আকার কেমন হবে তা বিবেচনা করে কেনা উচিত।

 

ডিভাইসের নিরাপত্তা ব্যবস্থা

ডিভাইসে স্ক্রিন লক এর ব্যবস্থা রাখুন। একই সাথে প্রয়োজনীয় এন্টিভাইরাস ইন্সটল করে নিন। ডিভাইসের সাথে প্যারেন্টাল কন্ট্রোল অ্যাপ যুক্ত করা সম্ভব কিনা তা জেনে নিন। কেননা শিশুদের ডিভাইসে নিয়ন্ত্রণ রাখার জন্য এসব অ্যাপের মাধ্যমে মনিটরিং করা প্রয়োজন হবে।

 

একটি বিকল্প

ধরুন আপনার সন্তানকে ইন্টারনেট মাধ্যম ব্যবহার করা যায় এমন কোন ডিভাইস দিতে চাচ্ছেন না। আপনার উদ্দেশ্য আসলে তার পড়াশোনার জন্য প্রয়োজনীয় ই-বুক পড়ার জন্য একটি ডিভাইস কেনা। সেক্ষেত্রে ভালো অনেক ই-বুক রিডার বাজারে পাবেন যেগুলো ই-বুক পড়ার জন্য ব্যবহৃত হতে পারে।