তথ্যের সত্যাসত্য এবং নির্ভরযোগ্যতা যাচাইবাছাই করার প্রয়োজনীয়তা

আমাদের দেশের বহুল প্রচলিত একটি প্রবাদ হলো –

‘চিল কান নিয়েছে শুনে চিলের পিছে দৌড়ানো’। কোনো তথ্য জানা মাত্রই সেটি যাচাই-বাছাই না করে প্রতিক্রিয়া দেখানোকে এই প্রবাদের সাহায্যে প্রকাশ করা হয়েছে। এর ফলাফল নানান কারণে ভয়াবহ হতে পারে। যেকোনো তথ্য সংগ্রহ করার পরে এর সত্যতা ও নির্ভরযোগ্যতা যাচাই করা অত্যন্ত জরুরি।

মনে করো, আগামীকাল সকালে তোমার গণিত পরীক্ষা। তোমার কোনো এক বন্ধুর সৌজন্যে তুমি জানতে পারলে যে, তোমার পরীক্ষার রুটিন পরিবর্তিত হয়েছে এবং গণিতের পরিবর্তে আগামীকাল তোমাকে ইংরেজি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে হবে। এই অবস্থায় তুমি গণিত অনুশীলন বাদ দিয়ে ইংরেজি অনুশীলন শুরু করলে। কিন্তু, পরে তোমার মা শ্রেণী শিক্ষককে জিজ্ঞাসা করে জানতে পারলেন, স্কুল থেকে রুটিন পরিবর্তন করার কোনো সিদ্ধান্তই নেওয়া হয়নি। এই অবস্থায় ইংরেজি অনুশীলন শুরু না করে তোমার করণীয় কী হতে পারতো?

অথবা, তুমি রেসলিং দেখতে পছন্দ করো। WWE এর সুপারস্টার ‘দ্য রক’ তোমার ভীষণ পছন্দ। দ্য রক এর আসল নাম ডুয়াইন জনসন। তো, একদিন বিকেলে তোমার বন্ধুর সাথে রেসলিং নিয়ে গল্প করতে করতে তুমি জানতে পারলে – ‘দ্য রক’ নামে পরিচিত ডুয়াইন জনসন মারা গিয়েছেন। এই খবর শুনে তুমি ভীষণভাবে মন খারাপ করলে এবং তোমার আরেক বন্ধু রুনি যে কিনা তোমার মতই ‘দ্য রক’ এর অনুসারী, তাকেও বাসায় ফিরে এই খবরটি জানালে। কিন্তু, পরবর্তীতে তোমার বাবার মাধ্যমে জানতে পারলে যে, ‘দ্য রক’ বেচে আছেন এবং তোমার জানা তথ্যটি ভুয়া ছিলো। এই ভুয়া তথ্যটি তুমি আসলে অজ্ঞতাবশত ছড়িয়ে দিয়েছো তোমার বন্ধুর (রুনি) কাছেও। এক্ষেত্রেও তোমার করণীয় কী হতে পারতো?

উভয়ক্ষেত্রেই তথ্যের সত্যতা, যেই উৎস থেকে তথ্যটি পেয়েছো সেটির গ্রহণযোগ্যতা এবং নির্ভরযোগ্যতা যাচাই বাছাই করলে তুমি বিড়ম্বনা এড়িয়ে যেতে পারবে। তাই প্রথমেই নিশ্চিত হতে হবে যে তথ্যটি “সঠিক” নাকি “ভুল”। সঠিক তথ্য যেমন বড় বড় সমস্যার সমাধান করতে পারে, তেমনি ভুল তথ্য অনেক বড় বড় সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে। মিথ্যা বা ভুল তথ্য যে সকল ক্ষয় ক্ষতি করতে পারে-

১। মিথ্যা বা ভুল তথ্যের কারণে মানুষ প্রতারিত হতে পারে।

২। মানুষের মধ্যে আতঙ্ক তৈরি হতে পারে।

৩। মানসিকভাবে ভেঙে পড়তে পারে।

৪। সামাজিক ও রাজনৈতিক হানাহানি, সংঘাত এমন কি প্রাণহানিও ঘটতে পারে।

এছাড়াও আর্থিক ক্ষয়ক্ষতি, সামাজিকভাবে হেয় হওয়া সহ আরও অনেক সমস্যার উদ্ভব ঘটতে পারে ভুল তথ্য শেয়ারের ফলে।  এজন্য কোন তথ্য প্রকাশ বা শেয়ারের আগে তথ্যের সঠিকতা সম্পর্কে নিশ্চিত হতে হবে।

কোন তথ্য জেনে প্রতিক্রিয়া দেখানো অথবা মানুষের মাঝে ছড়িয়ে দেওয়ার পূর্বে তোমাকে যেই কাজগুলি করতে হবে-

১। তথ্যের নির্ভুলতা ও প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে যাচাই-বাছাই করে নিশ্চিত হতে হবে। এজন্য তথ্যটি সম্পর্কে গুগলে সার্চ দিয়ে তথ্যের উৎস, তথ্য বা ঘটনার তারিখ ইত্যাদি জেনে নেওয়া দরকার। তথ্যের উৎস নির্ভরযোগ্য কিনা এবং সুপরিচিত কিনা, ছবি বা ভিডিও এডিট করা কিনা এসব গুগলে সার্চ করার মাধ্যমে জানা যায় এবং তথ্যটির সঠিকতা সম্পর্কে যাচাই করা যায়।

২। তথ্যটি শেয়ারের ফলে কোন বিভ্রান্তি, ভুল বোঝাবুঝি বা সংঘাতের সৃষ্টি হবে কিনা তা ভেবে দেখতে হবে।

 ৩। কোনো নির্ভরযোগ্য সূত্র এবং সংবাদ মাধ্যমে খোঁজ করতে হবে।

৪। বিষয়বস্তু নির্মাতার কী উদ্দেশ্য থাকতে পারে সে সম্পর্কে চিন্তা করতে হবে। 

৫। বিষয়বস্তুটি সমাজের কারো উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে কি না তা চিন্তা করতে হবে।