Warning about data storage in the app

রতন তার ছোট ভাই বোনদের অনেক ভালোবাসে। যে কোনো ছোট-বড় অনুষ্ঠানে সবাই মিলে বেশ আনন্দ করে। সামনে তার ছোট ভাইয়ের জন্মদিনের জন্য সে ভাবতে লাগলো কী করলে তার ভাই অনেক খুশি হয়ে যাবে। একটা বুদ্ধি পেয়ে গেলো; ভাবলো তার ভাইয়ের সাথে ছোটবেলা থেকে বড় হওয়া পর্যন্ত কিছু ছবি নিয়ে সেগুলো প্রিন্ট করে অ্যালবাম বানিয়ে দিবে। এজন্য সে অনেক বছর আগে থেকে তার ছোট ভাইয়ের সাথে যে ছবিগুলো ফেসবু্কে আপলোড দিয়েছিলো তার মধ্যে বেশ কয়েকটা ছবি ডাউনলোড করে সেগুলো প্রিন্ট করার জন্য দোকানে নিয়ে গেলো। প্রিন্ট করে ছবি গুলো বাসায় নিয়ে আসার পর দেখে সব ছবি গুলোর কোয়ালিটি খুবই বাজে; কিছু ছবি ভেঙেও গিয়েছে। ছবিগুলো দেখে তার মন বেশ খারাপ হয়ে গেলো।

পরের দিন ছবিগুলো নিয়ে তার বন্ধু সাদিককে দেখালে সে জিজ্ঞেস করলো ছবিগুলো আগে থেকেই এমন ছিলো কিনা। রতন জানালো ছবিগুলো আসলে কখনোই এমন ছিল না। তখন তার বন্ধু আবার জিজ্ঞেস করলো, ‘ছবিগুলো ফেসবুক থেকে ডাউনলোড করার সময় করার সময় কি তোমার ডাটা সেভার অন করা ছিলো?’ কিছুক্ষণ ভেবে রতন বললো, “ডাটা যাতে কম খরচ হয় এজন্য আমি তো সবসময়ই ডাটা সেভার অন করে রাখি।“তখন সাদিক বুঝিয়ে বললো যে এজন্যই তার ছবিগুলোর কোয়ালিটি এমন বাজে হয়ে গিয়েছিলো।

আমরা এখন অনেকেই মোবাইল ডাটা ব্যবহারে বেশ সচেতন হয়ে গেছি। ডাটা সাশ্রয়ের জন্য আমরা কিছু কৌশলও অবলম্বন করি; যেমন- ডাটা সেভার অন করে রাখা, প্রয়োজন ছাড়া ভিডিও অফ করে রাখা। মূলত ইন্টারনেটের গতি বৃদ্ধি পাওয়ায় অল্প সময়েই মোবাইলের অনেক ডাটা খরচ হয়ে যায়। মোবাইলের ডাটা খরচ কমানোর জন্য অনেকেই মোবাইলে ইন্টারনেট ব্যবহার সীমিত করে দিচ্ছে, আবার অনেকে রতনের মতো ডাটা সাশ্রয়ে সচেতন হচ্ছে। কিন্তু ডাটা সংরক্ষণের ক্ষেত্রেও কিছু সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে; নাহলে উপরের ঘটনার মতো কিছু অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা আমাদের সাথে হতে পারে।

চলুন তাহলে জেনে নিই ডাটা সংরক্ষণের সময় কোন বিষয়গুলো আমাদের মাথায় রাখতে হবে।

১) আমরা বিভিন্ন ধরনের প্রয়োজনে (যেমন- গবেষণার কাজে, স্লাইড প্রেসেন্টেশনে) ছবি ডাউনলোড করার জন্য গুগল ক্রোম ব্যবহার করে থাকি। এ অবস্থায় গুগল ক্রোম ব্রাউজারের ডাটা সেভার নামের ফিচারটি চালু করা থাকলে বিভিন্ন ছবি ও ওয়েব সাইটের তথ্য সংকুচিত করে মোবাইলে দেখাবে। এতে করে আপনার মোবাইল ডাটার খরচ অনেকটা কমে গেলেও ডাউনলোড করা ছবি ব্যবহারযোগ্য থাকবে না। এজন্য প্রয়োজনীয় তথ্য, ছবি বা ভিডিও ডাউনলোড করার সময় ব্রাউজারের ডাটা সেভার অপশনটি অফ করে নিন।

 

২) অডিও বা ভিডিও স্ট্রিমিং এর ক্ষেত্রে ডাটা সাশ্রয়ের জন্য আমরা অনেকসময়ই স্ট্রিমিং এর কোয়ালিটি একদম কমিয়ে রাখি। টুইটার, ইনস্টাগ্রাম ও ফেসবুক অ্যাপে আমরা এই ধরনের সুযোগ নিয়ে থাকি। কিন্তু অডিও বা ভিডিও স্ট্রিমিং যদি বেশ গুরুত্বপূর্ণ হয়ে থাকে (যেমন- অনলাইন কোর্সে অংশগ্রহণ, টেলিমেডিসিন সেবা গ্রহণ, সরাসরি ক্লাসে অংশগ্রহণ) তাহলে স্ট্রিমিং এর কোয়ালিটি কমিয়ে রাখার জন্য আমরা সেই ভিডিও থেকে কাঙ্ক্ষিত ফলাফল লাভ করতে পারব না। এজন্য এই বিষয়টি মাথায় রেখে অডিও ও ভিডিও-এর কোয়ালিটি নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।

৩) অনেক সময় অপ্রয়োজনীয় কিছু মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন আছে যা ব্যাকগ্রাউন্ডে কাজ করতে থাকে। ফলে মোবাইলের ডাটার অপচয় হয়। এজন্য আমরা মোবাইল ফোনের সেটিংসে গিয়ে Restrict Background অপশনটি চালু করে রাখি। এই অপশনটি চালু করার সময় খেয়াল রাখতে হবে যে, আমরা কোন অ্যাপের জন্য অপশনটি চালু করছি; অনেক সময় Restrict Background অপশনটি চালু করার কারণে অনেক প্রয়োজনীয় অ্যাপ ব্যাকগ্রাউন্ডে কাজ করা বন্ধ করে দিতে পারে। ফলে প্রয়োজনীয় নোটিফিকেশন আপনার দৃষ্টি এড়িয়ে যেতে পারে; যেমন- ম্যাসেঞ্জারের মেসেজের নোটিফিকেশন, হোয়াটসঅ্যাপের মেসেজ  নোটিফিকেশন। এতে করে জরুরি ভিত্তিতে কেউ আপনার সাথে যোগাযোগ করতে চাইলে সেটা সম্ভব হবে না। এই বিষয়টির ওপর যথেষ্ট গুরুত্ব দিয়ে শুধুমাত্র অপ্রয়োজনীয় মোবাইল অ্যাপ্লিকেশনগুলোর ক্ষেত্রে ব্যাকগ্রাউন্ডের কাজ বন্ধ রাখতে পারেন।

ডাটার খরচ বৃদ্ধির কারনে আমাদের অবশ্যই ডাটা সংরক্ষণের বিষয়ে সচেতন থাকতে হবে। তবে এই ডাটা সংরক্ষণ করতে গিয়ে যাতে কোনো প্রয়োজনীয় তথ্য দৃষ্টির অগোচরে না চলে যায়; সেজন্য আমাদের উপরে উল্লিখিত সতর্কতাগুলো অবলম্বন করে হবে।