কী কী কাজে ডিজিটাল ডিভাইস ব্যবহার করা যায়

রুবেল আহমেদ তার স্ত্রী ও দুই ছেলেকে নিয়ে ঢাকায় বাস করে। ছুটির দিনে একদিন তিনি তার মোবাইল ফোন দিয়ে সংবাদপত্র পড়ছিলেন। এমন সময় তার দুই ছেলে তার সামনে এসে বললো, “বাবা, তোমার মোবাইল ফোনটা দাও, আজ আমাদের অনলাইনে ড্রইং ক্লাস আছে। কিছুক্ষণের মধ্যেই শুরু হয়ে যাবে।“ ছেলেদের ফোনটি দিয়ে তার স্ত্রীর কাছে গিয়ে দেখে সে ইউটিউব দেখে দেখে রান্না শিখছে। সে মনে মনে বললো,” ডিজিটাল ডিভাইসগুলোর ব্যবহারের পরিধি কত বিশাল!”

আসলেই ডিজিটাল ডিভাইসগুলোর ব্যবহারের পরিধি সুবিশাল। যোগাযোগ করা থেকে শুরু করে বিশ্বের অসমাধানকৃত বিভিন্ন জটিল সমস্যার সমাধান বের করা সম্ভব হচ্ছে এই ডিজিটাল ডিভাইসের মাধ্যমে। এজন্য ডিজিটাল ডিভাইসের বিভিন্ন ধরনের ব্যবহার সম্পর্কে আমাদের ধারণা থাকা উচিৎ।

ডিজিটাল ডিভাইসের ব্যবহারের বিশাল পরিধিকে কয়েকটি ক্ষেত্রে ভাগ করে এর কাজগুলোকে আলোচনা করা হলো-

যোগাযোগের ক্ষেত্রে:

ডিজিটাল ডিভাইস ব্যবহারের মাধ্যমে বিশ্বের যে কোনো স্থান থেকে যে কোনো সময়ে যোগাযোগ স্থাপন করা সম্ভব।

ব্যবহারসমূহ:

১) মোবাইল ফোনের মাধ্যমে আমরা খুব সহজেই কথা বলা এবং বার্তা প্রেরণ করতে পারি।

২) শুধুমাত্র কথা বলার মধ্যেই সীমাবদ্ধ নেই, ডিজিটাল ডিভাইসে ইন্টারনেট সংযোগ থাকলে বিভিন্ন যোগাযোগ মাধ্যমে (যেমন- ভাইবার, হোয়াটসঅ্যাপ, মেসেঞ্জার ইত্যাদিতে) ভিডিও কল বা সরাসরি কথাপোকথনও সম্ভব।

৩) ডিজিটাল ডিভাইসের মাধ্যমে বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার (যেমন- ফেসবুক, টুইটার) করা সম্ভব।

এছাড়াও ডিজিটাল ডিভাইসে ইন্টারনেট সংযোগের মাধ্যমে ইমেইল, ছবি, ভিডিও বা যেকোনো ফাইল প্রেরণ করা সম্ভব।

শিক্ষা ক্ষেত্রে:

বর্তমানে শুধুমাত্র শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মাধ্যমেই শিক্ষা গ্রহণ আর সীমাবদ্ধ নেই। ডিজিটাল ডিভাইস ব্যবহারের মাধ্যমে আমরা ঘরে বসেই বিভিন্ন শিক্ষামূলক কাজে অংশগ্রহণ করতে পারি।

ব্যবহারসমূহ:

১) মোবাইল বা ল্যাপটপের মাধ্যমে শিক্ষামূলক বিভিন্ন অ্যাপ (যেমন- খান কিডস, লিংগো কিডস, টেন মিনিট স্কুল) ব্যবহার করা যায়।

২) মোবাইল বা ল্যাপটপের মাধ্যমে বিভিন্ন অনলাইন কোর্সে অংশগ্রহণ করা যায়।

৩) গুগল মিট, জুম, ক্লাসরুমসহ বিভিন্ন অ্যাপের মাধ্যমে শিক্ষামূলক আলোচনায় অংশগ্রহণ করার জন্য মোবাইল ফোন বা ডেস্কটপ /ল্যাপটপ দরকার পড়বে।

৪) যেকোনো ধরনের তথ্য অনুসন্ধানে ইন্টারনেটে সংযুক্ত করা একটি ডিজিটাল ডিভাইস দরকার।

৫) বর্তমানে বিভিন্ন চাকরির আবেদন, ফরম পূরণ অনলাইনের মাধ্যমেই সম্পন্ন হচ্ছে শুধু একটি ডিজিটাল ডিভাইসের সহায়তা নিয়ে।

কর্ম ক্ষেত্রে:

কর্মক্ষেত্রে সহকর্মীদের সাথে যোগাযোগ স্থাপন করা থেকে শুরু করে ইন্টারনেট ব্যবহার করে বিভিন্ন কাজকে আরও বেশি দ্রুততা এবং দক্ষতার সাথে সম্পন্ন করা সম্ভব হচ্ছে বিভিন্ন ধরনের ডিজিটাল ডিভাইসের ব্যবহারের মাধ্যমে।

ব্যবহারসমূহ:

টেলিকনফারেন্সিং ও ভিডিও কনফারেন্সিংসহ বিভিন্ন ধরনের অফিশিয়াল কাজের জন্য (যেমন-ওয়ার্ড প্রসেসিং সফটওয়্যার, স্প্রেডশিট সফটওয়্যার) করতে ল্যাপটপ বা ডেস্কটপ প্রয়োজন। এছাড়াও নিজস্ব কর্মক্ষেত্র সৃষ্টি (যেমন-ফ্রিল্যান্সিং) করতে ডিজিটাল ডিভাইস বেশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

যাতায়াতের ক্ষেত্রে:

ইন্টারনেট সংযোগে ডিজিটাল ডিভাইস ব্যবহার করে আমরা সারা বিশ্বের মানচিত্র একটি ছোট স্ক্রিনে আনতে পারি। ফলে যে কোনো জায়গায় যাওয়া আমাদের জন্য অনেক বেশি সহজ হয়ে গেছে।

ব্যবহার সমূহ-

১) মোবাইল ফোন ব্যবহার করে আমরা এখন খুব সহজেই নিজের অবস্থান ও আশেপাশের প্রয়োজনীয় স্থান সম্পর্কে ধারনা পেতে পারি।

২) নতুন কোনো জায়গায় যেতে সঠিক পথ প্রদর্শন এবং অন্য কারও অবস্থান ট্র্যাক করার জন্য আমরা আমাদের ডিজিটাল ডিভাইসের ম্যাপস অ্যাপগুলো (যেমন- গুগল ম্যাপস) ব্যবহার করতে পারি।

বিনোদনের ক্ষেত্রে:

বিভিন্ন প্রয়োজনীয় কাজের সাথে সাথে ডিজিটাল ডিভাইস বিনোদনের ক্ষেত্রেও উল্লেখযোগ্য স্থান দখল করে আছে।

১) টেলিভিশন দেখা, সিনেমা দেখা, গান শোনা, গেইম খেলা সহ বিভিন্ন ধরনের বিনোদনমূলক কাজের জন্য আমরা টেলিভিশন, মোবাইল ফোন বা ল্যাপটপ ব্যবহার করে থাকি।

২) ছবি তোলা ও ভিডিও বানানোর জন্য ডিজিটাল ক্যামেরা বা মোবাইল ফোন ব্যবহার করতে পারি এবং ডিজিটাল ডিভাইসের মাধ্যমেই বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছবি বা ভিডিও শেয়ার করতে পারি।

৩) ডিজিটাল ডিভাইস ব্যবহার করে আমরা অনলাইনে বিভিন্ন ধরনের বই পড়তে পারি।

এছাড়াও বিভিন্ন ধরনের অনলাইন সেবা যেমন- ডাক্তারের অ্যাপয়েনমেন্ট নেওয়া, ট্রেন বা বাসের টিকিট বুকিং, জাতীয় পরিচয়পত্র সংশোধন, জন্ম নিবন্ধন সংশোধন, টেলিমেডিসিন সেবা ইত্যাদি বিভিন্ন ধরনের সেবা আমরা খুব সহজেই ডিজিটাল ডিভাইস ব্যবহারের মাধ্যমে পেয়ে থাকি।