Issue area ডিজিটাল সিকিউরিটি আইনের গুরুত্বপূর্ণ ধারাসমূহ

ধরো, সমাজের বিধি-নিষেধের বাইরে গিয়ে তুমি যা খুশি করতে পারছো। তাহলে কেমন হত? তুমি হয়তো বলবে এটা মোটেও সম্ভব না। সম্ভব হলে কিভালো হতো? যা ইচ্ছা তাই করার সুযোগ বাস্তব জীবনে থাকলে জীবনধারণ কেমন বিশৃঙ্খল আর অরাজকতাপূর্ণ হয়ে যেত ভাবো তো একবার! সাইবার সেক্টরে তুমি যেই সুযোগ পাচ্ছো, সমাজের অপরাধীরাও তো একই সুযোগ পাচ্ছে। তাহলে এই অপার স্বাধীনতা যদি কোন নিয়মের মধ্যে না থাকে তাহলে তুমি নিজেই তো অপরাধের শিকার হতে পারো, তাই না? এ বিষয়ে ভেবেছো কখনো? তোমার আশেপাশের অনেক মানুষ অনলাইনে সাইবার বুলিং, ফ্রড, হ্যাকিং, যৌন সন্ত্রাসের শিকার হচ্ছে। সাইবার অপরাধ দমনের জন্যে বাংলাদেশে ২০১৮ সালে করা হয় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন। আইনের উদ্দেশ্য, ব্যবহার এবং আইন সাধারণ মানুষকে কোন কোন অপরাধ থেকে কী কী নিরাপত্তা দেয় সেসব না জানলে আইনের অপপ্রয়োগ ও আইনের সহায়তা না নেয়ার হার বেশি থাকে। সেজন্য  জেনে নেয়া যাক এই আইনের আলোচিত এবং গুরুত্বপূর্ণ কিছু ধারা ও অপরাধের শাস্তি সম্পর্কে। অর্থাৎ কোন কোন ডিজিটাল অপরাধ থেকে রাষ্ট্র আপনাকে সুরক্ষা দেয় এবং কোন কোন অপরাধে শাস্তি পরিমাণ কেমন সেই সম্পর্কে – গুরুত্বপূর্ণ ধারাসমূহ:১। কোন ডিজিটাল তথ্যভাণ্ডারে বেআইনী প্রবেশ এবং এর ক্ষতি করার উল্লেখ আছে আইনের ১৭ নং ধারায়।২। ১৮ নং ধারায় বর্ণনা করা হয়েছে অনলাইনে স্প্যাম শেয়ার করা, হ্যাকিং, কম্পিউটার ভাইরাস ছড়ানো এবং অনলাইনে আর্থিক জালিয়াতি সম্পর্কে।৪। মুক্তিযুদ্ধ, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, জাতির পিতা, জাতীয় পতাকা, জাতীয় সঙ্গীতের বিরুদ্ধে অপপ্রচার ও অবমাননার বিরুদ্ধে আইনের ২১ নং ধারার মাধ্যমে সুরক্ষা দেয়া হয়েছে।৫। অনলাইন মাধ্যমে মিথ্যা তথ্য দিয়ে আর্থিক বা অন্য কোন সুবিধা নেয়ার জন্যে প্রতারণার ব্যাপারে বলা হয়েছে ২৩ নম্বর ধারায় এবং মিথ্যা পরিচয় বা ছদ্মবেশ ধারণ করে প্রতারণা সম্পর্কে ২৪ নম্বর ধারায়।৮। ২৬ নম্বর ধারায় অনুমতি ছাড়া ব্যক্তিগত তথ্য সংগ্রহ, ব্যাবহারের উপর নিয়ন্ত্রণ আরোপ করা হয়েছে। যেমন – নাম, পিতা-মাতার নাম, জন্ম তারিখ, ফোন নাম্বার, জাতীয় পরিচয়পত্রের নাম্বার, পাসপোর্ট নাম্বার, ড্রাইভিং লাইসেন্স, জন্ম সনদ, ফিঙ্গার প্রিন্ট, ব্যাংক একাউন্ট নাম্বার, ডিএনএ প্রোফাইল বা অন্য যেকোন পরিচয় সংক্রান্ত তথ্য। ৯। ২৭ নং ধারায় অনলাইনে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড পরিচালনা এবং ২৮ নং ধারায় কোন ধর্মীয় গোষ্ঠীর ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করে ইচ্ছাকৃতভাবে অনলাইনে এমন তথ্য প্রচার বা মতামত প্রদানের বিরুদ্ধে সুরক্ষা দেয়া হয়েছে।১০। ৩১ নং ধারায় সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় শৃঙ্খলা বা সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্টকারী কার্যক্রমের বিরুদ্ধে সুরক্ষা দেয়া হয়েছে। সাধারণ নাগরিক হিসেবে দেশের আইন সম্পর্কে ভালোমত জানলে অনেক বিপদ থেকেই বেঁচে যাওয়া সহজ হয়। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন জানলে তুমি অনলাইনে তোমার আচরণ অপরাধ হচ্ছে কিনা সে সম্পর্কে সতর্ক থাকতে পারবে। পাশাপাশি তুমি বা তোমার আশেপাশের কেউ যদি সাইবার অপরাধের শিকার হয় তাহলে ব্যবস্থা নেয়াও তোমার জন্য সহজ হয়ে যাবে।

আরও জানুন
Issue area ডিজিটাল পরিমণ্ডলে অপরাধ ও শাস্তি

বর্তমান সময়ে সাইবার জগতটা আমাদের অন্য একটা বাস্তবতা হয়ে উঠেছে। এই সাইবার মাধ্যমে কাটানো সময়গুলোর প্রভাব জীবনে বেশি করেই অনুভূত হচ্ছে। আমাদের জীবনযাত্রা সহজ করার পাশাপাশি অপরাধীদের কার্যক্রমও সহজ হয়ে গেছে! আবার আমরা নিজেরাও অনেক সময় না জেনে, না বুঝে নানান অপরাধের শিকার হচ্ছি, আবার ক্ষেত্রবিশেষে অপরাধও করছি। একটা রাষ্ট্রে মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাপন ও শৃঙ্খলা রক্ষার স্বার্থে কার্যকরী আইন প্রয়োগ জরুরি। তেমনি এই পরিবর্তিত বিশ্ব ব্যবস্থায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন সাইবার অপরাধ নিয়ন্ত্রণে ভালো ভূমিকা রাখতে পারে।আমরা ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের নাম সকলে শুনলেও কোন কোন অপরাধ এই আইনের আওতায় আসবে সেগুলো অনেকেই জানিনা। অনলাইনে কোন কোন অপরাধের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার সুযোগ আছে এবং কোনগুলো বাংলাদেশী আইনে অপরাধ সেসবও অজানাই রয়ে গেছে।এই আইনের আওতায় থাকা গুরুত্বপূর্ণ কিছু অপরাধ এবং এর শাস্তি সম্পর্কে বিস্তারিত জানলে আমাদের জন্যে অনেক ঝামেলা এড়িয়ে যাওয়া সম্ভব হবে। আইন প্রদত্ত নিরাপত্তাও হবে সহজলভ্য।উল্লেখযোগ্য সাইবার অপরাধ এবং শাস্তিসমূহ:১। কোন ডিজিটাল তথ্যভাণ্ডারে বেআইনি প্রবেশ এবং এর ক্ষতি করা।বেআইনি প্রবেশের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ৭ বছরের জেল এবং ২৫ লক্ষ টাকা জরিমানা। ক্ষতিসাধনের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ১৪ বছরের জেল এবং ১ কোটি টাকা জরিমানা করা হয়। এই অপরাধ আবারো করলে অনধিক ৫ কোটি টাকা অর্থদণ্ড বা যাবজ্জীবন কারাদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হতে পারেন।  ২। অনলাইনে স্প্যাম মেসেজ (জাঙ্ক মেসেজ) শেয়ার করা, হ্যাকিং, কম্পিউটার ভাইরাস ছড়ানো এবং অনলাইনে আর্থিক জালিয়াতি করলে –৬ মাস থেকে ৩ বছরের জেল এবং ২ লক্ষ থেকে ১০ লক্ষ টাকা জরিমানা করা হয়।একই অপরাধ পুনরাবৃত্তি হলে শাস্তির পরিমাণ দ্বিগুণ হয়ে যাবে।৩। মুক্তিযুদ্ধ, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, জাতির পিতা, জাতীয় পতাকা, জাতীয় সঙ্গীতের বিরুদ্ধে অপপ্রচার ও এসব জাতীয় বিষয়ের অবমাননা করলে বা তাতে মদদ দিলে সর্বোচ্চ ১০ বছরের জেল এবং ১ কোটি টাকা জরিমানা হতে পারে। এই অপরাধ একাধিকবার করলে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ও ৩ কোটি টাকা পর্যন্ত জরিমানা হতে পারে।৪। অনলাইন মাধ্যমে মিথ্যা তথ্য দিয়ে আর্থিক বা অন্য কোন সুবিধা নেয়ার জন্যে প্রতারণা এবং মিথ্যা পরিচয় বা ছদ্মবেশ ধারণ করে প্রতারণা এই দুই ক্ষেত্রেই অনধিক ৫ বছরের কারাদণ্ড এবং ৫ লক্ষ টাকা জরিমানা করা হতে পারে। একই অপরাধ আবারও করলে শাস্তির মাত্রা বেড়ে ৭ বছরের জেল এবং ১০ লক্ষ টাকা অর্থদণ্ড হতে পারে।৫। অনুমতি ছাড়া ব্যক্তিগত তথ্য সংগ্রহ, ব্যবহার যেমন – নাম, পিতা-মাতার নাম, জন্ম তারিখ, ফোন নাম্বার, জাতীয় পরিচয়পত্রের নাম্বার, পাসপোর্ট নাম্বার, ড্রাইভিং লাইসেন্স, জন্ম সনদ, ফিঙ্গার প্রিন্ট, ব্যাংক একাউন্ট নাম্বার, ডিএনএ প্রোফাইল বা অন্য যেকোনো পরিচয় সংক্রান্ত তথ্য ব্যবহার করা একটি সাইবার অপরাধ। এই অপরাধে অনধিক ৫ বছরের জেল এবং ৫ লক্ষ টাকা জরিমানা করা হতে পারে। একই অপরাধ আবারো করলে শাস্তির পরিমাণ বেড়ে ৭ বছরের জেল এবং ১০ লক্ষ টাকা জরিমানা হতে পারে।৬। রাষ্ট্রীয় অখণ্ডতা, নিরাপত্তা ও সার্বভৌমত্ব বিপন্ন করা এবং জনগণ বা এর কোনো অংশের মধ্যে ভয়ভীতি সঞ্চার করার জন্যে কোনো কম্পিউটার বা কম্পিউটার নেটওয়ার্ক বা ইন্টারনেট নেটওয়ার্কে বৈধ প্রবেশে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে বা বে-আইনি প্রবেশ করে তাহলে সর্বোচ্চ ১৪ বছরের কারাদণ্ড এবং ১ কোটি টাকা জরিমানা করা হতে পারে। অপরাধে আবারও জড়িত হলে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড এবং ৫ কোটি টাকা পর্যন্ত অর্থদণ্ড হতে পারে।৭। কোন ধর্মীয় গোষ্ঠীর অনুভূতিতে আঘাত করে ইচ্ছাকৃতভাবে অনলাইনে এমন তথ্য প্রচার বা মতামত প্রদান করলে সর্বোচ্চ ৫ বছরের কারাদণ্ড এবং ১০ লক্ষ টাকা জরিমানা হতে পারে। অপরাধের পুনরাবৃত্তির ক্ষেত্রে শাস্তি বেড়ে ১০ বছরের জেল এবং ২০ লক্ষ টাকা অর্থদণ্ড হতে পারে।৮। কেউ যদি ইচ্ছাকৃতভাবে ওয়েবসাইট বা ডিজিটাল মাধ্যমে এমন কিছু প্রকাশ বা সম্প্রচার করেন বা করান, যা সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন শ্রেণি বা সম্প্রদায়ের মধ্যে শত্রুতা, ঘৃণা বা বিদ্বেষ সৃষ্টি করে।কিংবা সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট করে বা অস্থিরতা বা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে অথবা আইন-শৃঙ্খলার অবনতি ঘটায় তাহলে অনধিক ৭ বছরের কারাদণ্ড এবং ৫ লক্ষ টাকা জরিমানা হতে পারে। এই অপরাধ পুনরাবৃত্তি করলে শাস্তির পরিমাণ বেড়ে গিয়ে ১০ বছরের কারাদণ্ড এবং ১০ লক্ষ টাকা অর্থদণ্ড হতে পারে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের আওতায় থাকা অপরাধ এবং এর শাস্তির পরিমাণ জানাই যথেষ্ট নয়। এই আইনের মাধ্যমে সঠিক নাগরিক অধিকার আদায় করে নিয়ে ব্যক্তিজীবন, ভার্চুয়াল জীবন সবখানেই নিরাপদ থাকার নিশ্চয়তা না পেলে মানুষের আস্থা কমে যাবে দিন দিন। এই আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকা এবং তা মেনে চলার প্রক্রিয়াটি শুরু হোক আইন সম্পর্কে জানার মাধ্যমেই!

আরও জানুন
Issue area কপিরাইট সংরক্ষণে করণীয়

তুমি বাজারে গিয়ে যদি কোন টাকা ছাড়াই সব কিনে ফেলতে পারো তাহলে কী ভালোই হতো, তাইনা? না, ভালো হতো না। তুমি ক্রেতার দিক থেকে ভাবছো বলে ভালো মনে হচ্ছে, একবার বিক্রেতার দিক থেকে ভাবো। ধরো, তুমি একজন বিক্রেতা যার কাছ থেকে সকলে পণ্য নিয়ে নিচ্ছে কিন্তু তার মূল্য দিচ্ছেনা। সাধারণ বাজারের ক্ষেত্রে হয়তো এই ব্যাপারটা হয়না, কিন্তু মেধা সম্পদের ক্ষেত্রে একজন কোন একটা পণ্য ক্রয় করে সেই পণ্যকে কপি করে অনেকের কাছে বিক্রি করে। এই বিক্রির কোন অংশ যিনি আসল মালিক তিনি পাননা। পান যিনি সেটার কপি বা পাইরেসি করছেন। সেক্ষেত্রে পাইরেসি বন্ধে কার্যকর কপিরাইট আইন এই মেধাসম্পদের নিরাপত্তা দেয়।মেধা সম্পদ, পাইরেসি এবং কপিরাইট আইন কী?একজন কবি যে কবিতা লেখেন, শিল্পী যে গান করেন, ছবি আকেন বা ভাষ্কর্য্ নির্মাণ করেন, চলচ্চিত্রকার যে সিনেমা বানান, নাট্যকার যে নাটক বানান সেসব হচ্ছে ইন্টেলেকচুয়াল প্রোপার্টি বা মেধা সম্পদ। মেধা সম্পদের বেআইনি কপি করে যদি কেউ সেসব বিক্রি বা ব্যবহার করে সেটি হবে পাইরেসি। এই পাইরেসি বন্ধ এবং মেধা সম্পদের নিরাপত্তা প্রদানের লক্ষ্যে প্রণয়ন করা আইন হচ্ছে কপিরাইট আইন।কোন বস্তুগত জিনিসের যেমন মালিকানা থাকে, তেমনই প্রতিভা ও মেধা দিয়ে তৈরি সম্পদেরও মালিকানা থাকে। কপিরাইট মানে হচ্ছে মেধাগত সম্পদের উপর মালিকানার স্বীকৃতি। এই সম্পদটি ব্যাবহার, বিপণন বা ক্রয়-বিক্রয়ের উপর যিনি সৃষ্টি করলেন তার অধিকার সুরক্ষিত করে কপিরাইট আইন। বাংলাদেশে কপিরাইট আইন আছে, কিন্তু সে আইন মানার চর্চা ও প্রয়োগ না থাকায় অনেকেই এই বিষয়ে জানেন না। এই বিষয়ে তাই আমাদের জানা, মানা এবং চর্চা করা প্রয়োজন। কপিরাইট আইন ভঙ্গের কারণ ও ক্ষতি:কপিরাইট সংরক্ষণে বাংলাদেশে আইন আছে, কিন্তু সে আইনের কার্যকর প্রয়োগ নেই। এর কারণ সম্ভবত ব্যবহারকারী এবং  এর উৎপাদক এই দুই দলের মানুষের মধ্যে কারোরই এই আইন ও আইনের প্রয়োগ সম্পর্কে ভালো ধারণা না থাকা। এর পিছনে সাংস্কৃতিক কিছু কারণও হয়তো দায়ী। যেমন আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থায় বা জীবনে চলার পথে আমরা অন্যের কোন মেধা সম্পদ থেকে কিছু নিলে বা সরাসরি ব্যবহার করলে সেজন্য মূল মালিককে কৃতিত্ব দিতে অভ্যস্ত নই। আবার নিম্ন আয়ের দেশ হওয়ায় সকলেই মৌলিক প্রয়োজনের বাইরে বিনোদন বা বুদ্ধিবৃত্তিক উন্নতির জন্যে বাড়তি অর্থ ব্যয় করতে সাধারণত আগ্রহী হয়না। আবার ডিজিটাল প্রযুক্তির সাথে তাল মিলিয়ে নতুন নিরাপত্তা ব্যবস্থা বা নতুন বিপণন ব্যবস্থা তৈরি করতে না পারাও বড় একটি কারণ।  সর্বোপরি বলা যায়, এই আইন সম্পর্কে ভালোভাবে জানাশোনা এবং আইনের প্রয়োগ থাকলে মেধাসম্পদের নিরাপত্তা দেয়া অনেক সহজ হয়ে যায়। এই আইন ভঙ্গের কারণে সৃজনশীল মানুষদের বিপুল পরিমাণ ক্ষতি হচ্ছে এবং এই ক্ষতির জন্যে আমাদের শিল্প-সাহিত্য-চলচ্চিত্র সেভাবে মাথা তুলে দাড়াতে পারছেনা। একজন লেখক বই প্রকাশ করার পর সেই বই যদি কপি করে কেউ মুনাফা করে ফেলে বা তা বিনামূলে সবার কাছে ছড়িয়ে দেয় তাহলে লেখক আর নতুন কোন বই লিখে বিক্রির আশাই হয়তো করবেন না। এভাবেই চলচ্চিত্রনির্মাতা, সঙ্গীতশিল্পী বা এ ধরনের যে কোন শিল্পই পাইরেসির কারণে ক্ষতির শিকার হচ্ছে।বাংলাদেশে কপিরাইট আইন ও কপিরাইট সংরক্ষণ করার উপায় কী?বাংলাদেশে ১৯৭৪ সালে প্রথম কপিরাইট আইন করা হয়। এরপর ২০০০ সাল এবং ২০০৫ সালে এই আইন পরিবর্তন করা হয়। সর্বশেষ পরিমার্জন করা হয় ২০১৮ সালে।বুদ্ধিবৃত্তিক সম্পদগুলো পেটেন্ট অফিস থেকে নিজ নামে পেটেন্ট করে নিতে হয়। পেটেন্ট করা মানে হচ্ছে সরকারী রেজিস্ট্রেশন করে নিজ নামে এই সম্পদের সামগ্রিক অধিকারের সরকারি স্বীকৃতি। পরে যদি অন্য কেউ এটি ব্যবহার করে তাহলে সে মূল নির্মাতাকে কৃতিত্ব দিবে এবং ক্ষেত্রবিশেষে মুনাফার ভাগ দিবে। কপিরাইট সংরক্ষণে করণীয় --      সরকারি কপিরাইট অফিসে যেকোন মেধা সম্পদের রেজিস্ট্রেশন করতে হবে। এর মাধ্যমে প্রমাণ হবে এর স্বত্ত্ব কপি রাইট রয়েছে যার তার। রেজিস্ট্রেশন না হলে পাইরেসির বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয়া যায় না।-      পাইরেসি হলে উপযুক্ত প্রমাণসহ লিখিত অভিযোগ করতে হবে।-      সবার মধ্যে কপিরাইটের ব্যাপারে যথাযথ সচেতনতা তৈরি করতে হবে।-      সকল ক্ষেত্রে আইনের প্রয়োগ কঠোর করতে হবে। 

আরও জানুন
Issue area বিদ্যমান আইনানুসারে অনলাইনে ক্ষতির শিকার হলে করণীয়

অনেক সতর্ক থাকার পরেও অনলাইনে ক্ষতির শিকার হয়ে যাওয়াটা অসম্ভব না। এত এত ওয়েবসাইট, অ্যাপ, লিঙ্কের মধ্যে কোনটা আসল আর কোনটা প্রতারণা সেসব বোঝাটা অনেক কঠিন। অনলাইনে যৌন হয়রানি, একাউন্ট হ্যাকিং,অশালীন আচরণ, ছবি এডিট করে অশ্লীল প্রচারণা, ছদ্মবেশে সম্পর্কের ফাঁদে ফেলার মত ব্যাপারগুলো খুবই অহরহ ঘটছে। ডিজিটাল মাধ্যমে কাউকে চাইলেই চরিত্র হনন করে প্রচারণা করা যাচ্ছে। এত সহজে যে ব্যাপারগুলো অপরাধীরা ঘটাচ্ছে সেগুলো আইনের আওতায় না আসার কারণে দিন দিন এর পরিমাণ বেড়েই যাচ্ছে। তারপর বিকাশ ফ্রড বা লটারি জেতার কথা বলে, অমুক জায়গায় এতগুলো ক্লিক করলে এত টাকা ইনকামের প্রলোভনে পরে ব্যক্তিগত তথ্য বা টাকা-পয়সা হারাচ্ছেন অনেকেই। এই ভিক্টিমদের বেশিরভাগই সামাজিকভাবে অপমানিত হবার ভয়ে বা নিজেই হেলাফেলা করে কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে অপরাধিকে শাস্তির আওতায় আনেন না। যার মাধ্যমে পার পেয়ে গিয়ে সেই অপরাধী অন্য কারো ক্ষতি করছে। অনলাইনে অপরাধের শিকার হলে আমরা কীভাবে পরিস্থিতি অনুযায়ী ব্যবস্থা  নিতে পারি চলো জেনে নেই –১। সময়ক্ষেপণ না করে ঘনিষ্ঠ কাউকে জানাও:যখনই বুঝবে তুমি সাইবার ক্রাইমের শিকার হয়েছো তখনই ঘনিষ্ঠ কাউকে বিস্তারিত জানাও। সে হতে পারে এমন কেউ যে তোমার পরিস্থিতি বুঝবে। যে শুধু তোমাকেই দোষী না করে সমস্যাটা সমাধানের চেষ্টা করবে।২। প্রমাণ রাখো:অপরাধের যেসব প্রমাণ তোমার হাতে আছে সেসব স্ক্রিনশট নিয়ে, সম্ভব হলে ইউআরএল সহ সেইভ করে রাখো। কারণ আইনি ব্যাবস্থায় গেলে সেগুলো তোমার কাজে লাগবে। সম্ভব হলে বিশ্বাসযোগ্য কাউকে এই প্রমাণগুলো পাঠিয়ে রাখো।৩। অপরাধীকে ব্লক করো:অপরাধীর সাথে যোগাযোগ বিচ্ছিন করো। ফোনে কল ও মেসেজ ব্লক করে, বা অন্য মাধ্যমগুলোতে ব্লক করে দাও।৪। তোমার ব্যবহৃত ডিজিটাল প্লাটফর্মের নিরাপত্তা বাড়াও:যদি তুমি অনলাইনে ফিশিং, ভিশিং(ভয়েস ব্যবহার করে ফিশিং), হ্যাকিং, হ্যারাজমেন্ট, বুলিংয়ের শিকার হও তাহলে সাথে সাথেই তোমার একাউন্টের পাসওয়ার্ড পরিবর্তন করে ফেলো।  টু ফ্যাক্টর অথেনটিকেশন বা পাসওয়ার্ডের পাশাপাশি দ্বিতীয় একটি মাধ্যম, যেমন তোমার ফোনে এসএমএস ও ইমেইলে নিশ্চিত হয়েই একাউন্টে প্রবেশের অনুমতি দেয়ার ব্যাবস্থা চালু করো। এক্ষেত্রে কেউ তোমার পাসওয়ার্ড পেয়ে গেলেও একাউন্টে ঢুকতে গেলে তোমার কাছে মেইল বা মেসেজ চলে আসবে।৫। জিডি করে রাখো:পার্শ্ববর্তী থানায় এই অপরাধের বিবরণসহ একটি জিডি করে রাখো। তাহলে পুলিশের কাছে এই অপরাধের একটা রেকর্ড থাকলো।৬। ভিক্টিমের পাশে থাকো:তোমার পরিবারের বা বন্ধুদের মধ্য কেউ অপরাধের শিকার হলে তাঁকে দোষী না করে তাঁর পাশে থাকী। কারণ দোষী করলে সব তোমাকে বিস্তারিত নাও জানাতে পারে। সেক্ষেত্রে আইনী সহায়তা নেয়া কঠিন হয়ে যাবে।৭। দ্রুত আইনি ব্যবস্থা নাও:যিনি অপরাধের শিকার হন তাঁর পক্ষে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া কঠিন। কেননা মানসিক অস্থিরতা, ট্রমা কাটিয়ে উঠে সহজে ব্যাবস্থা নেয়া খুবই কঠিন। তারপরেও যত দ্রুত সম্ভব আইনগত ব্যবস্থা নেয়া উচিত। এক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় ভূমিকা রাখতে পারেন ভিক্টিমের কাছের লোক যারা এই ব্যাপারটা জানেন।৮। সাইবার ক্রাইম নিয়ন্ত্রণে যুক্ত কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ করো:সরাসরি থানায় গিয়ে মামলা করা যেতে পারে, তবে পুলিশের যেসব ইউনিট সাইবার ক্রাইম নিয়ন্ত্রনে কাজ করছে তাদের কাছে গেলে ফলাফল পাবার সম্ভাবনা বেশি। যেমন- নারীদের জন্যে আছে পুলিশের ফেসবুক পেইজ  ‘Police Cyber Support for Women PCSW’। এছাড়া সাইবার ক্রাইম নিয়ে কাজ করে ডিএমপি’র কাউন্টার টেরোরিজম ডিভিশনের ‘সাইবার ক্রাইম ইউনিট’।অনলাইনে মানুষ ছোটখাট কিছু অপরাধ করে, যে সব কাজ তারা সরাসরি হয়তো করতো না।। এর পিছনে একটা কারণ সম্ভবত এইখানে মানুষের সাথে সামনাসামনি ঝামেলায় জড়ানোর সম্ভাবনা নাই। ভার্চুয়াল জগত তাদের মুখোশের মতই কাজ করে। ফেইক আকাউন্ট খুলে অনেক অপরাধই এভাবে চলে। আমরাও এগুলোকে আইনের আওতায় আনি না। এমনকি এসবের শিকার হয়েও অনেকক্ষেত্রে আইনী ব্যবস্থায় না গিয়ে সমাধানের চিন্তা করি। এসবের মাধ্যমে আমরা অপরাধীর জন্যে নিশ্চিন্ত পরিবেশই তৈরি করছি আসলে। 

আরও জানুন
Issue area যে কোন প্রকার সাইবার ক্রাইম যথাযথ কর্তৃপক্ষকে জানানোর পদ্ধতি, যোগাযোগের ঠিকানা, মোবাইল নম্বর

সাইবার ক্রাইম কী? অনলাইন প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে অপরাধ হিসেবে বর্ণনা করা কোন কিছু করাকে সাইবার ক্রাইম বলা যায়। ধরো তুমি বা তোমার পরিচিত কেউ সাইবার ক্রাইমের শিকার হলো। এখন তুমি অপরাধীর বিরুদ্ধে ব্যাবস্থা নিতে চাচ্ছো। কীভাবে নিবে? আমাদের দেশে সাইবার অপরাধের শিকার বেশিরভাগ ভিক্টিমই অপরাধীদের আইনের আওতায় আনে না বা আনতে পারেনা। নারী-পুরুষ উভয়েরই সাইবার সিকিউরিটি আইন সম্পর্কে জানাশোনা কম থাকায় এবং আইনের সহযোগিতা নেবার মাধ্যম না জানায় অভিযোগ করছে না বেশিরভাগই। চলো দেখা যাক যদি কেউ অপরাধের শিকার হয়েই যায় তাহলে কীভাবে যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ জানাতে পারবে। কোথায় অভিযোগ করবে? অভিযোগ জানানোর জন্য নিম্নোক্ত উপায়ে পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করা যাবে:প্রাথমিকভাবে অভিযোগ করতে পারো তোমার নিকটস্থ থানায়।Police Cyber Support for Women PCSW নামে ফেসবুক পেইজে মেসেজ দিয়ে অভিযোগ জানাতে হবে।cybersupport.women@police.gov.bd বা cyberhelp@dmp.gov.bd  এই দুইটি ঠিকানায় ইমেইল করা যাবে।                                                                                                                                            পুলিশ সদর দফতরের ০১৩২০০০০৮৮৮ নম্বরে ফোন করে অভিযোগ জানানো যাবে।হটলাইন নম্বর ৯৯৯ এ ফোন করেও অভিযোগ করা যাবে।সরাসরি কথা বলার প্রয়োজনবোধ করলে চলে আসতে পারো ডিএমপি’র কাউন্টার টেরোরিজম ডিভিশনের Cyber Crime Unit অফিসে। কথা বলতে পারো দায়িত্বরত কর্মকর্তার সাথে এই নাম্বারে-০১৭৬৯৬৯১৫২২ । ঠিকানা: ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ হেডকোয়ার্টার্স, ৩৬, শহীদ ক্যাপ্টেন মনসুর আলী স্মরণী, রমনা, ঢাকা। কীভাবে অভিযোগ করবে?সাইবার অপরাধের শিকার হলে যত দ্রুত সম্ভব অভিযোগ জানানো উচিত। অভিযোগ করার ক্ষেত্রে তোমার অভিযোগের স্বপক্ষে কিছু প্রমাণাদি প্রয়োজন। যেমন এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট আলামতের স্ক্রীনশট, লিংক, অডিও/ভিডিও ফাইল অথবা রিলেটেড ডকুমেন্টস। স্ক্রীনশট সংগ্রহের ক্ষেত্রে খেয়াল রাখতে হবে যেন Address Bar এর URL টি দৃশ্যমান হয়। ই-মেইল এর মাধ্যমে অভিযোগ জানাতে চাইলে এসব কন্টেন্ট এটাচ করে আপলোড করতে পারো। সর্বোপরি তুমি প্রয়োজনে Cyber Crime Unit এর অফিসারদের নিকট থেকে প্রয়োজনীয় পরামর্শ গ্রহণ করতে পারো যা তোমার আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের সহায়ক হতে পারে।সর্বোপরি, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মাধ্যমে সাইবার অপরাধ হ্রাস নিশ্চিত করতে হলে এই সংক্রান্ত জ্ঞান মানুষের মধ্যে আরো বেশি করে প্রচার করতে হবে। সাধারণ মানুষের কাছে এসব আইনি সেবা আরো সহজলভ্য করতে হবে। নাহলে গালভরা আইন শুধু কাগজে কলমেই থেকে যাবে, কোন কাজে লাগবেনা।  

আরও জানুন